দেশে তৈরি মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার গাড়ি আনল র্যানকন – দাম ও বিস্তারিত

বাংলাদেশে দেশীয় মিতসুবিশি গাড়ির যাত্রা শুরু করল র্যানকন
বাংলাদেশে জাপানের জনপ্রিয় অটোমোবাইল ব্র্যান্ড মিতসুবিশির ‘এক্সপ্যান্ডার’ মডেলের গাড়ি এবার দেশীয় কারখানায় তৈরি হয়ে বাজারে আসছে। র্যানকন মোটরস গত শনিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই গাড়ির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে।
দেশীয় উৎপাদনে নতুন দিগন্তের সূচনা
দেশে গাড়ির সংযোজন কাজের বাইরেও এখন সম্পূর্ণ গঠন, রং ও বিভিন্ন পরীক্ষামূলক ধাপ র্যানকনের নিজস্ব কারখানায় হচ্ছে। এই কারখানায় প্রায় এক বছর ধরে ব্যাপক আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে, যার জন্য সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুরের ভবানীপুর গ্রামে অবস্থিত র্যানকন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে এসব গাড়ি তৈরি হচ্ছে।
৫২ একর আয়তনের এই শিল্প পার্কে মিতসুবিশি গাড়ির পাশাপাশি মার্সিডিজ বেঞ্জ বাসের চেসিস, সুজুকি মোটরসাইকেল, প্রোটন, জ্যাক, এলজি ও তোশিবার মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের বক্তব্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি। তিনি বলেন, “২০১৯ সালে এই প্রকল্প শুরু হয় যখন বাংলাদেশ সরকার দেশের অটোমোবাইল শিল্পকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হয়। গাড়ি আমদানি কমিয়ে ও দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমরা শিল্প খাতের বৈচিত্র্য আনতে চাই। মিতসুবিশি ও র্যানকনের এই উদ্যোগ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
র্যানকন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রোমো রউফ চৌধুরী বলেন, “দেশীয় উৎপাদনে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সরকারের নীতিসহায়তায় আমরা গাড়ির দাম প্রায় ১১ লাখ টাকা কমিয়ে দিতে পেরেছি। দেশীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।”
মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশনের বিভাগীয় মহাব্যবস্থাপক ইউতাকা ইয়ানো বলেন, “বাংলাদেশের উৎপাদন কেন্দ্র বিশ্বমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি। আমরা গর্বিত যে বাংলাদেশ এখন মানসম্পন্ন মিতসুবিশি গাড়ি তৈরি করতে সক্ষম।”
গাড়ির প্রযুক্তি ও বৈশিষ্ট্য
‘এক্সপ্যান্ডার’ মডেলটি ১৫০০ সিসি ইঞ্জিনের। এটি ৭ জন যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭০ কিলোমিটার গতিবেগ ধরে রাখতে পারে। গাড়ির ওজন প্রায় ১,২৬০ কেজি। এটি পাহাড়ি এলাকা ও দুর্গম পথে চলার জন্য উপযোগী।
গাড়িটি মোট সাতটি রঙে পাওয়া যাবে — ডিপ ব্রোঞ্জ মেটালিক, গ্রাফাইট গ্রে মেটালিক, কোয়ার্টজ হোয়াইট পার্ল, রেড মেটালিক, ব্লেড সিলভার মেটালিক, গ্রিন ব্রোঞ্জ মেটালিক এবং জেট ব্ল্যাক মাইকা।
বাজারে ‘এক্সপ্যান্ডার’ গাড়িটি চারটি সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে—স্পোর্টস, প্রিমিয়াম, ক্ল্যাসিক ও ইকো। ক্ল্যাসিক সংস্করণের দাম ৩৫ লাখ টাকা, প্রিমিয়াম সংস্করণ ৩৬ লাখ টাকা, স্পোর্টস সংস্করণ ৩৮ লাখ টাকা এবং এলপিজি চালিত ইকো সংস্করণ ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
দেশীয় অটোমোবাইল শিল্পে মিতসুবিশির অবদান
বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্পের উন্নয়নে মিতসুবিশির এই উদ্যোগ দেশের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে গাড়ির খরচ কমানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ সরকারের “দেশে তৈরি গাড়ি” নীতির সাফল্যও প্রমাণিত হচ্ছে।
এছাড়া, দেশের ক্রেতারা এখন আন্তর্জাতিক মানের গাড়ি সাশ্রয়ী মূল্যে পেতে পারবে, যা আগের তুলনায় বেশ বড় সুবিধা। এই প্রকল্পের ফলে দেশের গাড়ি আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং অভ্যন্তরীণ শিল্প খাতকে শক্তিশালী করার পথ তৈরি হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা
র্যানকন ও মিতসুবিশির অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি উৎপাদনের জন্য পথ সুগম করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে দেশীয়ভাবে তৈরি গাড়ি যেমন জনপ্রিয়তা পাবে, তেমনি এই উদ্যোগ দেশের শিল্প খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করবে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের অর্থনীতিতে দেশীয় গাড়ি উৎপাদনের এই বড় অগ্রগতি একটি বড় ধাক্কা হিসেবে কাজ করবে, যা আরও নতুন বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশে তৈরি মিতসুবিশি ‘এক্সপ্যান্ডার’ গাড়ি আনয়নের মাধ্যমে দেশের অটোমোবাইল শিল্পে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন গাড়ি সরবরাহের পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখন সময় এসেছে দেশীয় গাড়ি ব্যবহার বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার। মিতসুবিশি ও র্যানকনের যৌথ এই প্রয়াস বাংলাদেশকে বিশ্বমানের গাড়ি উৎপাদনের রোডম্যাপে নিয়ে যাচ্ছে।