বানিজ্য

প্রাইম ব্যাংকের উদ্যোগে সাত উদ্যোক্তাকে সম্মাননা

দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা হয় এমএসএমই (মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটিরশিল্প) খাতকে। এই সেক্টর দেশের গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এমএসএমই খাতের অবদানকে সম্মান জানাতে এবং উদ্যোক্তাদের উদ্দীপনা বৃদ্ধি করতে গতকাল শনিবার ঢাকার একটি বিশিষ্ট হোটেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংক আয়োজন করে বিশেষ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নির্বাচিত সাতজন এমএসএমই ও কৃষি খাতের উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রাইম ব্যাংকের এই উদ্যোগ উদ্যোক্তা উন্নয়নে এক অনন্য প্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সম্মাননার পেছনের গল্প

বিশ্ব এমএসএমই দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রাইম ব্যাংক তার দেশের প্রায় ১১ হাজার সক্রিয় ঋণগ্রহীতাদের মধ্য থেকে ছয়জন এমএসই উদ্যোক্তা ও একজন কৃষি খাতের উদ্যোক্তাকে বিশেষভাবে বেছে নিয়ে সম্মাননা প্রদান করে।

এই নির্বাচনে প্রধানত বিবেচনা করা হয়—

  • পণ্যের বৈচিত্র্য
  • বার্ষিক রাজস্ব
  • কর্মসংস্থানের মাত্রা
  • প্রাইম ব্যাংকের সাথে সম্পর্কের গভীরতা
  • উদ্যোক্তার লিঙ্গ (নারী-পুরুষ)
  • উদ্যোগের ধরন (উৎপাদন, সেবা, ট্রেডিং)

এই মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সফল উদ্যোক্তাদের সম্মানিত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের বিশিষ্ট অতিথিরা

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এমএসই বিভাগের পরিচালক নওশাদ মোস্তফা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এমএসই ফাউন্ডেশনের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ নাজিম হাসান সাত্তার, যিনি অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান ও. রশীদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে বলেন,

“এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। তারা শুধু কর্মসংস্থানই সৃষ্টি করছে না, গ্রামীণ উন্নয়নে এবং আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই খাতের উন্নয়ন মানেই দেশের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রগতি।”

তিনি আরও যোগ করেন,

“প্রাইম ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে এমএসই উদ্যোক্তাদের পাশে থেকে তাদের উন্নয়ন ও অর্থায়নে কাজ করে যাচ্ছে। এই সম্মাননা তাদের আরও উৎসাহ যোগাবে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।”

অনুষ্ঠানে প্রাইম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম নাজিম এ চৌধুরী সহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এমএসএমই খাত: দেশের অর্থনীতির প্রাণ

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৯০% কর্মসংস্থান সরবরাহ করে এমএসএমই খাত। এটি দেশে বিনিয়োগ ও জিডিপির বড় অংশ অবদান রাখে। বিশেষ করে গ্রামীণ ও আঞ্চলিক উন্নয়নে এই সেক্টরের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা নতুন নতুন পণ্য ও সেবা বাজারে এনে দেশের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করছে।

সরকারও এমএসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, কর ছাড় এবং ঋণ সহায়তা দিয়ে উদ্যোক্তাদের পেছনে কাজ করছে। প্রাইম ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানও তাদের অর্থায়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই খাতকে শক্তিশালী করছে।

প্রাইম ব্যাংকের এমএসএমই খাতে অবদান

প্রাইম ব্যাংক দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক যারা এমএসএমই খাতের জন্য বিশেষভাবে কাজ করে আসছে। ব্যাংকটির বিশেষত্ব হল ঋণ বিতরণে সহজ নীতিমালা, কম সুদের হার, এবং উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনমত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ সেবা দেওয়া।

বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের কাছে দেশের প্রায় ১১,৫০০ এর বেশি এমএসই ঋণগ্রহীতা সক্রিয় রয়েছে, যারা শিল্প, কৃষি, সেবা, ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। এই সংখ্যার মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগী নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা দেশে নারীর ক্ষমতায়নে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

ব্যাংকটি নিয়মিত উদ্যোক্তা সম্মেলন, কর্মশালা ও নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট আয়োজন করে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসায়িক সংযোগ গড়ার সুযোগ করে দেয়।

সম্মানিত সাত উদ্যোক্তার পরিচিতি ও তাদের সাফল্য

অনুষ্ঠানে সম্মানিত সাত উদ্যোক্তার প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা উদ্যোগ রয়েছে।

  • মোস্তফা হোসেন (খুলনা) — কৃষি খাতের উদ্যোক্তা, যিনি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করেছেন।
  • রিপা আক্তার (ঢাকা) — নারী উদ্যোক্তা, যারা হস্তশিল্প ও বস্ত্র শিল্পে অভিনব ডিজাইন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
  • আব্দুল্লাহ আল মামুন (রাজশাহী) — ক্ষুদ্র মেসিনারি শিল্পের উদ্যোক্তা, যিনি স্থানীয় বাজারে নতুন প্রযুক্তি সরবরাহ করছেন।
  • সুমন দাস (চট্টগ্রাম) — খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায় সফল উদ্যোক্তা।
  • মালেক রানা (বরিশাল) — সেবা খাতে আইটি সমাধান ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে উল্লেখযোগ্য অবদান।
  • নিলুফার পারভিন (সিলেট) — কৃষি পণ্যের ট্রেডিং ব্যবসা চালানো নারী উদ্যোক্তা।
  • ফারুক হোসেন (রংপুর) — ক্ষুদ্র কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে নতুন বাজার সৃষ্টি করেছেন।

তাঁদের সফলতার পেছনে রয়েছে প্রাইম ব্যাংকের ঋণ সহায়তা, পরামর্শ ও নিরলস প্রচেষ্টা।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা

প্রাইম ব্যাংক আরও বেশি উদ্যোক্তাকে এমএসএমই খাতে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,

“আগামীতে আমরা আরও প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু করবো, যেমন ডিজিটাল ঋণ প্রক্রিয়াকরণ, দ্রুত ঋণ অনুমোদন, উদ্যোক্তাদের জন্য অনলাইন প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য সহায়তা।”

এছাড়া, সরকার ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় এমএসএমই খাতের জন্য বিশেষ সুবিধা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

প্রাইম ব্যাংকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান বাংলাদেশের এমএসএমই খাতের উন্নয়নের দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের প্রতি এই সম্মাননা তাদের কর্মজীবনে নতুন উদ্দীপনা যোগাবে। পাশাপাশি, অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে এমএসই খাতের গুরুত্ব তুলে ধরে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করবে।

সঠিক অর্থায়ন, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এমএসই খাতকে শক্তিশালী করার প্রত্যয়ে প্রাইম ব্যাংকের এই উদ্যোগ দেশের অন্যান্য ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button