বানিজ্য

অবশেষে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তিতে সই: ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা

বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান, নতুন আশা জাগালো বৃহত্তর বাণিজ্য সহযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতির দুই শক্তিধর দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরেই বৈশ্বিক বাজারে টানাপোড়েনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সই সম্পন্ন হয়েছে। এটি বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান এবং ভবিষ্যতে স্থিতিশীল বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ট্রাম্পের ঘোষণাঃ “আমরা চুক্তি সই করেছি”

গত বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, “আমরা কিছুদিন আগে চীনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছি।” যদিও তিনি বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেননি, তবে আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের বিরতি ও সমাধানের অংশ।

জেনেভা চুক্তির ধারাবাহিকতা

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নতুন সমঝোতা ‘জেনেভা চুক্তি’ বাস্তবায়নের একটি পরবর্তী ধাপ। গত মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের বিরতি নিয়ে আলোচনা করে এবং একমত হয় যে, উভয়পক্ষের মধ্যে শুল্ক আরোপ এবং পাল্টা শুল্ক অন্তত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। এই নতুন চুক্তি সেই ভিত্তির উপর গড়ে তোলা হয়েছে।

বিরল খনিজ রপ্তানি পুনরায় শুরু

মূলত এই চুক্তির মাধ্যমে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানি পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। এই পদক্ষেপে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা আসবে, যা বিশেষ করে গাড়ি, মহাকাশ প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর মন্তব্য

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে জানান, চুক্তিটি দুই দিন আগেই সই করা হয়েছে, তবে তিনি বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। একই সঙ্গে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, লন্ডনে অনুষ্ঠিত আলোচনা থেকে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সমঝোতা অব্যাহত রয়েছে। আইনি শর্ত পূরণের ভিত্তিতে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হবে।

চীনের প্রতিক্রিয়া ও নতুন নিয়ন্ত্রণ

চীনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল তার মধ্যে বেশ কিছু শিথিল করা হবে। ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেসব অশুল্কমূলক প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ধাপে ধাপে প্রত্যাহার করা হবে। যদিও সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এখনও স্পষ্ট নয়।

বাণিজ্যযুদ্ধে বিরল খনিজ ও প্রযুক্তির গুরুত্ব

গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ থাকায় বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পে চরম প্রভাব পড়ে। চীনের নিষেধাজ্ঞায় আমেরিকার বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারীরা সংকটে পড়ে। পাল্টা হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনও চীনে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার, বিমান ও প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

বিরল খনিজ সরবরাহে সাময়িক ছাড়

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জুনের শুরুতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিরল খনিজ রপ্তানিতে সাময়িক ছাড় দেয়। এই সিদ্ধান্ত সরবরাহ সংকট কাটানোর উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছিল।

ভবিষ্যত সহযোগিতার আশ্বাস

মাসের শেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, এই সমঝোতার আওতায় চীন যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চুম্বক সরবরাহ করবে। বিনিময়ে, চীনা শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। এটি দুই দেশের মধ্যে কেবল বাণিজ্যই নয়, শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচিত করবে।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের গুরুত্ব

বিশ্ব অর্থনীতির দুই বৃহত্তম শক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক শুধুমাত্র দুই দেশের জন্যই নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তি সফল হলে বিশ্ব বাজারে পণ্য ও সেবা বিনিময়ে স্বস্তি আসবে, বাণিজ্যিক মন্থরতা কমবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক ও বিধিনিষেধের অস্থিরতা কমবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button