২০৮ কোটি টাকায় ২৫ হাজার টন অকটেন আমদানির অনুমোদন

বাংলাদেশ সরকার ২০৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি জুন মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৫ হাজার টন অকটেন আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের ২৪তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মোট সাতটি প্রস্তাব অনুমোদন পায়, যার মধ্যে তিনটি ছিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের। অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তিনটি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল।
অকটেন আমদানির বিস্তারিত
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পিটি বুমি সিয়াক পুসাকো জাপিন (বিএসপি) থেকে ২৫ হাজার টন গ্যাসোলিন ৯৫ আনলেডেড (অকটেন) আমদানি করা হবে।
এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রতি ব্যারেলের প্রিমিয়াম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫.৯৩ মার্কিন ডলার এবং রেফারেন্স মূল্য ৭৩.৬১০ মার্কিন ডলার।
অর্থ উপদেষ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, “বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমরা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি আমদানি করতে পেরেছি। যুদ্ধের আগের মূল্য এবং যুদ্ধপরবর্তী দর বিবেচনায় দেখা গেছে, আমরা ৫ থেকে ১০ ডলার কম মূল্যে অকটেন পাচ্ছি। এতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা ইস্যু সত্ত্বেও এই ক্রয় প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি, বরং এটা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সফল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
জিটুজি চুক্তির আওতায় পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি
এছাড়াও বৈঠকে জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ মেয়াদে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জিটুজি (সরকার-টু-সরকার) মেয়াদি চুক্তির আওতায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী ১০ হাজার ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে।
এই আমদানির জন্য সাতটি বিদেশি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে সুপারিশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে:
- থাইল্যান্ডের পিটিটিটি
- সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইএনওসি
- চীনের প্রেট্রোচায়না ও ইউনিপেক
- ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি
- মালয়েশিয়ার পিটিএলসিএল
- ভারতের আইওসিএল (ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড)
এই আমদানির মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণ এবং শিল্প ও পরিবহন খাতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিশ্ববাজারে চলমান অস্থিরতা, বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত এবং জ্বালানি সরবরাহের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক কৌশলগত সফলতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কারণ যুদ্ধকালীন এবং পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ওঠানামা করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দ্রুত রি-টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সরকার প্রস্তাবিত দর থেকে ৫–১০ মার্কিন ডলার কমে জ্বালানি আমদানি করতে সক্ষম হয়েছে, যা উল্লেখযোগ্য অর্থ সাশ্রয় করেছে।
সার আমদানিও অনুমোদিত
উক্ত বৈঠকে শুধু অকটেন নয়, একইসঙ্গে ৬৮১ কোটি টাকায় তিনটি দেশ থেকে এক লাখ ৫ হাজার টন সার আমদানির প্রস্তাবও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সার আমদানিতে মূল্য কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “মরক্কো, তিউনিসিয়া থেকে আসা সারেও কিছু মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু সেখানে আমাদের করার কিছু ছিল না। বিশ্ববাজারের বাস্তবতা মেনেই আমদানি করতে হয়েছে।”
রিজার্ভ ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত
বৈঠকের দিনেই জানানো হয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা সাম্প্রতিককালের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।
এছাড়া গুম সংক্রান্ত কমিশনের মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা মানবাধিকার সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকারের প্রতিফলন বলে বিবেচিত হচ্ছে।
উপসংহার
এই ক্রয়সংক্রান্ত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। জ্বালানির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রিমিয়াম ও রেফারেন্স মূল্য নির্ধারণে দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র ব্যবস্থাপনার কারণে সরকারের সাশ্রয়ী ব্যয়ের দৃষ্টান্ত উঠে এসেছে।
একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় কৌশলগতভাবে আমদানি কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ অর্থনীতিকে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।