বানিজ্য

ট্রান্সকম গ্রুপের দুটিসহ ৩০ প্রতিষ্ঠান পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

পরিবেশবান্ধব এবং উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরিতে গৌরবজনক ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ট্রান্সকম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানসহ দেশের মোট ৩০টি শিল্প ও কারখানাকে “পরিবেশবান্ধব কারখানা পুরস্কার” (গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড) প্রদান করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আবদুল গণি সড়কের ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান এসব পুরস্কার তুলে দেন।

পরিবেশবান্ধব শিল্পের অগ্রদূত: ট্রান্সকম গ্রুপের অবদান

ট্রান্সকম গ্রুপের “ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস” ও “এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস” এই সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছে। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস ওষুধ খাতের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। এ ছাড়াও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, এবং ইস্পাহানি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এই পুরস্কারে ভূষিত হয়। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চরকা টেক্সটাইল ও হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো; আকিজ গ্রুপের আকিজ টেক্সটাইল ও আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ; এবং ইস্পাহানি গ্রুপের জেরিন চা-বাগান ও মির্জাপুর চা-বাগান এই সম্মানে অংশীদার।

শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবন ও দায়িত্বশীলতা

পরিবেশ বান্ধব কারখানা হিসেবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত। যেমন:

  • বস্ত্র খাত: মানিকগঞ্জের চরকান্দার আকিজ টেক্সটাইল মিলস, হবিগঞ্জের মাধবপুরের পাইওনিয়ার ডেনিম, চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের কেডিএস টেক্সটাইল মিলস ও পটিয়ার ফোর এইচ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং।
  • নিট তৈরি পোশাক খাত: নরসিংদীর পলাশের চরকা টেক্সটাইল, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ইকোটেক্স ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ফকির ফ্যাশন।
  • ওভেন তৈরি পোশাক খাত: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া তারাসিমা অ্যাপারেলস, গাজীপুরের জিরানী বাজারের আউকু টেক্স ও ময়মনসিংহের স্কয়ার ফ্যাশন।
  • ইলেকট্রনিক পণ্য খাত: নরসিংদীর শাষপুরের ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, নরসিংদীর শিবপুরের ফেয়ার ইলেকট্রনিকস ও গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ।
  • চামড়া শিল্প: ময়মনসিংহের ভালুকার সুনিভার্স ফুটওয়্যার একমাত্র পরিবেশবান্ধব হিসেবে পুরস্কৃত।

শ্রম আইন সংশোধনের পথে নতুন দিগন্ত

প্রধান অতিথি শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বক্তব্যে জানান, আগামী অক্টোবরের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম আইন সংশোধন করা হবে, যা নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব ও উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

বিভিন্ন খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি

  • অটোমোবাইল খাত: চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ একমাত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত।
  • খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ: ধামরাইয়ের আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের হবিগঞ্জ অ্যাগ্রো।
  • চা শিল্প: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের জেরিন ও মির্জাপুর চা-বাগান।
  • জাহাজ ভাঙা ও নির্মাণ: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ, খুলনার লবণচরার খুলনা শিপইয়ার্ড এবং সীতাকুণ্ডের কেআর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড।
  • সিমেন্ট খাত: গাজীপুরের কালীগঞ্জের সেভেন সার্কেল।
  • ইস্পাত খাত: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএসআরএম স্টিলস।

পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, সনদ ও আর্থিক অনুদান

পুরস্কার প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার পক্ষ থেকে ট্রফি, সনদপত্র এবং এক লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এ ধরণের পুরস্কার দেশের শিল্পখাতে পরিবেশ সচেতনতা ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি উৎসাহ যোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের শিল্প খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের উপর চাপও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরি করা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে। ট্রান্সকম, প্রাণ, আকিজ, ইস্পাহানি এবং অন্যান্য শিল্প গোষ্ঠী এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশের উন্নয়নকে সবুজ এবং টেকসই করার পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

সম্মাননা অর্জনের মাধ্যমে উদাহরণ স্থাপন

এই পুরস্কারগুলো শিল্পখাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও কার্যক্রম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে। একই সাথে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মান বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে এর দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button