ভোক্তা অধিদপ্তর চালু করল ‘বাজারদর’ অ্যাপ, জানা যাবে সারাদেশের পণ্যমূল্য
বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য সুখবর। দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ও ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) চালু করেছে ‘বাজারদর’ নামের একটি আধুনিক অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মোবাইল ফোনে জানা যাবে দৈনন্দিন খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বোচ্চ মূল্য।
২৩ জুন, সোমবার রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলীম আক্তার খান।
বাজার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে ডিজিটাল পদক্ষেপ
ডিএনসিআরপি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ৬৪টি জেলার খুচরা বাজারের সর্বশেষ পণ্যমূল্য এখন অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই জানা যাবে। এটি দেশের সাধারণ ভোক্তাদের জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।
মহাপরিচালক আলীম আক্তার খান উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন,“পণ্যের দামের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাজারদর অ্যাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক দাম বাড়ানোর প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে।”
অ্যাপের মূল বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
‘বাজারদর’ অ্যাপটি ডিজাইন ও ডেভেলপ করেছে ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, যা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডিএনসিআরপি-কে প্রদান করা হয়েছে।
অ্যাপের নির্মাতা ইব্রাহিম মোল্লা বলেন,
“আমাদের লক্ষ্য ছিল সাধারণ জনগণের হাতের মুঠোয় বাজার তথ্য পৌঁছে দেওয়া। বাজারদর অ্যাপের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে দাম নিয়ে কারসাজি ঠেকানো যাবে।”
অ্যাপটির বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:
- ৬৪ জেলার প্রতিদিনের আপডেটকৃত খুচরা মূল্য তালিকা
- ইন্টারনেট ছাড়াও অফলাইন মোডে ব্যবহারের সুবিধা
- সহজ ইউজার ইন্টারফেস
- বিভিন্ন পণ্যের ক্যাটাগরি অনুসারে খোঁজার ব্যবস্থা
- ভোক্তা অভিযোগ জানানোর অপশন
পণ্যের তালিকায় কী কী থাকছে?
অ্যাপটিতে প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা দাম হালনাগাদ করা হয়। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- চাল (সেদ্ধ ও আতপ)
- ডাল (মসুর, মুগ, ছোলা)
- ভোজ্যতেল (সয়াবিন, পাম, সরিষা)
- সবজি (আলু, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি)
- মাছ (রুই, কাতলা, ইলিশ, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস)
- মাংস (গরু, খাসি, মুরগি)
- ডিম, দুধ
- ফলমূল (আপেল, কলা, মাল্টা, কমলা ইত্যাদি)
ভোক্তা সচেতনতায় নতুন যুগের সূচনা
‘বাজারদর’ অ্যাপের মাধ্যমে শুধু পণ্যের দাম জানাই নয়, ভোক্তারা সরাসরি অভিযোগ জমা দিতে পারবেন যদি কেউ বেশি দাম নেয় বা প্রতারণা করে। এর মাধ্যমে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং দোষী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের উদ্যোগ শুধু ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের বাজার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনবে।
প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারি উদ্যোগ প্রশংসনীয়
এমন একটি সময় যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কথা বারবার বলা হচ্ছে, তখন এই অ্যাপ জাতীয় পর্যায়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণ হবেন সচেতন, আর ব্যবসায়ীরা পড়বেন নজরদারির আওতায়।
সরকারি উদ্যোগে তৈরি হওয়া এ ধরনের অ্যাপ আগামীতে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রয় কেন্দ্রের অবস্থান, মূল্যতালিকা যাচাইকরণ এবং পণ্যের মানসম্পন্ন তথ্যও যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যবহার পদ্ধতি: অ্যাপ কীভাবে ডাউনলোড ও ব্যবহার করবেন?
১. গুগল প্লে স্টোরে প্রবেশ করুন
২. সার্চ বক্সে লিখুন ‘বাজারদর’
৩. অফিশিয়াল অ্যাপ (জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোগোসহ) ইনস্টল করুন
৪. অ্যাপ চালু করে জেলা বেছে নিয়ে কাঙ্ক্ষিত পণ্যের দাম দেখুন
যেকোনো ব্যবহারকারী খুব সহজেই এই অ্যাপ ব্যবহার করে লাভবান হতে পারবেন, বিশেষ করে যারা প্রতিদিন বাজারে যান বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে পণ্যের দর সম্পর্কে ধারণা রাখতে চান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও পরামর্শ
ডিএনসিআরপি সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপটির উন্নয়ন ও আপডেট প্রক্রিয়া চলমান। ভবিষ্যতে এখানে যুক্ত হতে পারে:
- অ্যালার্ট সিস্টেম (পণ্যের দামের হঠাৎ পরিবর্তন হলে ব্যবহারকারীকে জানানো)
- অনলাইন বাজারের সঙ্গে সমন্বয়
- বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবসায়ী ও বিক্রেতার রেটিং ব্যবস্থা
- ইউজার ফিডব্যাক ও পণ্যের মান যাচাই
শেষ কথা
‘বাজারদর’ অ্যাপ বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এটি শুধু বাজারে স্বচ্ছতা আনবে না, বরং প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে।
ভোক্তাদের কাছে এই অ্যাপ হতে পারে এক শক্তিশালী হাতিয়ার, যা বাজারের বাস্তব তথ্য জানিয়ে দেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ।
