বানিজ্য

সোমবার কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন শুল্ক–কর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান কাঠামো ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘যৌক্তিক সংস্কার’-এর দাবিতে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শুল্ক, আয়কর ও ভ্যাট বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই অংশ হিসেবে আগামী সোমবার (২৩ জুন) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে তিন ঘণ্টার অবস্থান ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন তারা।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এবং মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার মিজ সেহেলা সিদ্দিকা বক্তব্য দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রাজস্ব খাতের সংস্কার প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে এগোচ্ছে না, বরং নানা সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ রাজস্ব সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ফলে তাঁকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানো হয়।

তারা বলেন, “বর্তমান চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। ইতোমধ্যেই তাঁকে এনবিআর ভবনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে উপেক্ষা করছেন এবং বারবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অস্তিত্ব ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।”

কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় ক্ষোভ

১৯ জুন এনবিআর গঠিত ছয় সদস্যের একটি সংস্কার কমিটি নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ঐক্য পরিষদ। বক্তারা জানান, কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সেই কমিটিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এমনকি গঠনের আগে কোনো আলোচনাও হয়নি। এতে স্পষ্ট, সংস্কারের নামে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

৩০১ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন

এদিন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের একটি পূর্ণাঙ্গ ৩০১ সদস্যের অ্যাডহক কমিটিও গঠন করা হয়। এতে হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার সভাপতি এবং সেহেলা সিদ্দিকা মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। এই কমিটি আগামী দিনের আন্দোলন এবং নীতিগত দাবিগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে বলে জানান নেতারা।

‘কেমন এনবিআর চাই’—সেমিনারে বাধা অভিযোগ

পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ চাওয়া হলেও তা নাকচ করে দেওয়া হয়। লিখিতভাবে আবেদন জানানো হলেও আয়োজনে অনুমতি না দেওয়া এবং কক্ষ বরাদ্দ না করায় তীব্র প্রতিবাদ জানায় পরিষদ।

অধ্যাদেশ জারির পর উত্তাল রাজস্ব খাত

উল্লেখ্য, গত ১২ মে সরকার এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ এবং ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। এর পর থেকেই এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেন।

সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ দেখা গেছে। আন্দোলনকারীরা বারবার বলেন, সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে হঠাৎ করে এমন গঠনমূলক পরিবর্তন আরোপ করা হলে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অচলাবস্থা তৈরি হবে।

সরকারের আশ্বাস ও কর্মীদের সন্দেহ

প্রতিবাদ ও কর্মসূচির মুখে গত ২৬ মে সরকার ঘোষণা দেয়, এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের সংশোধনের বিষয়টি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এর অংশ হিসেবে ১৯ জুন গঠিত হয়েছে নতুন কমিটি। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের দাবি, সেই কমিটি অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় আন্দোলন থেকে সরে আসার সুযোগ নেই।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, “সংস্কার মানেই একতরফাভাবে নতুন বিভাগ করা নয়। এটা হতে হবে অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তা না হলে আমরা কর্মসূচি আরও তীব্র করব।”

সারাদেশে একই কর্মসূচি

ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার সকালে সারাদেশের শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর অফিসগুলোতে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মকর্তারা কলমবিরতি পালন করবেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা নিজ নিজ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবেন এবং কাজ বন্ধ রাখবেন। তবে জনগণের জরুরি সেবার যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এ ধরনের কর্মসূচির কারণে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটা হচ্ছে ‘সতর্কতা কর্মসূচি’। দাবি না মানলে পরবর্তী ধাপে লাগাতার আন্দোলনে যাওয়া হবে।

উপসংহার

এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার, নেতৃত্ব পরিবর্তন, এবং নীতিগত অংশগ্রহণ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা এখন সংঘবদ্ধ আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। সরকারের ঘোষিত অধ্যাদেশ সংশোধন প্রক্রিয়া কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এর মধ্যে সোমবারের কর্মসূচি রাজস্ব প্রশাসনের অস্থিরতার চিত্র আরও স্পষ্ট করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button