
পিরোজপুরের নাজিরপুরে হাত-পা বাঁধা এক নারী অচেতন অবস্থায় উদ্ধার। তাঁর শরীর ও মুখে মরিচের গুঁড়া মাখানো ছিল। ঘটনাটি নিয়ে চলছে পুলিশের তদন্ত।
৯৯৯-এ ফোন পেয়ে উদ্ধার হাত-পা বাঁধা নারীর
রোববার দুপুরের দিকে পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার আলামকাঠী এলাকায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অচেতন এক নারী উদ্ধার হয়েছেন। স্থানীয়রা তাকে সড়কের পাশে পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ জরুরি সেবায় খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে নারীকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। নারীর শরীরের বিভিন্ন অংশে মরিচের গুঁড়া মাখানো ছিল, আর তার পরনে থাকা কাপড় ছেঁড়া ও অগোছালো অবস্থায় ছিল।
আহত নারীর পরিচয় ও ঘটনার বিবরণ
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, আহত ওই নারীর বয়স আনুমানিক ৩২ বছর এবং তার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নে। তিনি সকালে পিরোজপুর থেকে অটোরিকশায় নাজিরপুর যাচ্ছিলেন। পথে এক সময়ে চারজন ব্যক্তি ওই অটোরিকশায় উঠে তার চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর নারীকে অচেতন অবস্থায় সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়। সে সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে।
নারী নিজেও এখনও পুরোপুরি বলতে পারছেন না তিনি কীভাবে এই অবস্থায় পড়েছেন বা কী ঘটেছিল। তবে তিনি জানিয়েছিলেন যে তাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার শরীরের উপর মরিচের গুঁড়া মাখানো ছিল, সম্ভবত যন্ত্রণা ও শাস্তির উদ্দেশ্যে।
হাসপাতালের চিকিৎসা ও ডাক্তারি পরীক্ষা
পিরোজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ডাক্তাররা তাকে তাত্ক্ষণিক জরুরি সেবা প্রদান করছেন। নারীর শরীর ও মনোবল রক্ষায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণ বা অন্য কোনো অপরাধ ঘটেছে কিনা সেটি জানার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত নারীকে উদ্ধার করেছে। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলেই পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
ঘটনাটির প্রাথমিক তদন্ত ও পুলিশি ব্যবস্থা
পুলিশ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজনদের শনাক্তকরণ ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ওই নারীর নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারি রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকায় বিরল হলেও সম্প্রতি নারী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সবাই পুলিশের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছেন।
নারী নির্যাতন ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
এ ধরনের নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশের নারীর নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের সংকেত। সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা ও লাঞ্ছনার ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও শাস্তির ব্যবস্থা কঠোর করার দাবি সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে।
নারী ও শিশু অধিকার সংস্থা গুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছেন, “দেশে নারীর নিরাপত্তা এখন খুবই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। এ ধরনের ঘটনায় যেন কোনও ধরনের আপোষ না হয়।”
পুরোনো ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে?
পিরোজপুর ও আশেপাশের এলাকায় পুরোনো কিছু নারীর উপর নির্যাতন ও শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা আগে ঘটলেও, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরিচের গুঁড়া লাগানো এই ঘটনা বেশ বিরল। এমন নৃশংসতা সমাজের জন্য আশঙ্কাজনক দিক নির্দেশ করছে।
অতীতেও কয়েকটি ক্ষেত্রেই ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে উদ্ধার করা হয়েছে আহত নারীদের, যেখানে অপরাধীরা ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর তাদের রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে। এসব ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
পুলিশ বলছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সব রকম উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পিরোজপুরে নারী নিরাপত্তার জন্য বিশেষ টিম গঠন ও সচেতনতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরবর্তী সময়ে নারীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানানো হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো, পুলিশ পেট্রোল বৃদ্ধি, এবং সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চালানোর মাধ্যমে নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
সারসংক্ষেপ
পিরোজপুরের নাজিরপুরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মরিচের গুঁড়া লাগানো অবস্থায় এক নারীর উদ্ধার একটি ভয়াবহ সামাজিক সংকেত। নারী নির্যাতন, নিপীড়ন ও সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। ঘটনার তদন্তে দ্রুত অগ্রগতি ও দোষীদের বিচারের দাবি উঠেছে। এদিকে, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো জরুরি হয়ে উঠেছে।
এম আর এম – ০৪৩৮, Signalbd.com