বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৯

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারালেন অন্তত ১৯ জন। আহত ও দগ্ধ শতাধিক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন।
বিমান বিধ্বস্তের বিস্তারিত: নিহত ১৯, আহত শতাধিক
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই মডেলের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) তথ্যমতে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এবং একজন শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে অনেকেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
দুর্ঘটনার সময় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর একাই বিমানে ছিলেন। তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় সিএমএইচ-এ নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা
আইএসপিআর জানায়, দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং এর মাত্র ১৬ মিনিট পর দুপুর ১টা ২২ মিনিটে এটি বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় স্কুল চলছিল এবং শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। স্কুল ছুটির আগ মুহূর্তে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ একটি বিকট শব্দ হয় এবং এরপরেই আগুন আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে শোকবার্তায় জানানো হয়েছে, এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় জাতি শোকাহত। সরকার আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া, মঙ্গলবার (২২ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
উদ্ধার তৎপরতা: সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের সম্মিলিত অভিযান
দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে উদ্ধার কাজে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিজিবির একাধিক প্লাটুন। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দিতে নারায়ণগঞ্জ-উত্তরা মেট্রোরেলের একটি বগি রিজার্ভ করা হয়।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরাও উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। দগ্ধদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সিএমএইচ, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল এবং অন্যান্য ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের পরিস্থিতি ও চিকিৎসা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটের সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৬০ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন, যাদের অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। বার্ন ইউনিটে চালু করা হয়েছে জরুরি হটলাইন: ০১৯৪৯০৪৩৬৯৭।
বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে স্বেচ্ছাসেবীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন রক্তদানের আহ্বান নিয়ে। ফেসবুকে ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রক্তদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিশেষজ্ঞ মত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দুর্ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। বিশিষ্টজনেরা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে চেয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশিক্ষণ বিমানের এমন দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি, আবহাওয়ার প্রভাব কিংবা মানবিক ভুল – যেকোনো কিছুই হতে পারে এর পেছনে। তবে তদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ভবিষ্যতের করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নিয়মিত বিমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন এবং জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়ানো জরুরি।
সরকার ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভবিষ্যতে সুরক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হবে বলে জানা গেছে।
সারসংক্ষেপ
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, বিজিবি ও নৌবাহিনী। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের এই ঘটনা শুধু নিহত ও আহতদের পরিবারেই নয়, পুরো জাতির হৃদয়ে গভীর শোকের ছাপ ফেলেছে। এটি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং আমাদের অবকাঠামো ও সুরক্ষা ব্যবস্থার এক কঠিন বাস্তবতা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে — কীভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করা সম্ভব?
এম আর এম – ০৪৪০, Signalbd.com