রাজনীতি

দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রায়পুরায় বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, নিহত এক তরুণ

Advertisement

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় দীর্ঘদিনের বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, গুলিবর্ষণ এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুরে নিলক্ষা ইউনিয়নের দড়িগাঁও দক্ষিণপাড়া এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় কার্যালয়ের ভেতর ও বাইরে থাকা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছবি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন মামুন মিয়া (২৫)। তিনি দড়িগাঁও এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে নাজিমউদ্দীন গ্রুপের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। গুলিবিদ্ধসহ মোট ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া দুইজন হলেন বেলাল (৩০), পিতা আব্দুর রশিদ এবং আব্দুল আওয়াল (৫৫), পিতা মস্তু মিয়া। অন্য আহতদের স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সংঘর্ষের কারণ

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাজিম উদ্দীন মেম্বার ও আলাল মুন্সি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জেরে আজকের সংঘর্ষ রক্তাক্ত রূপ নেয়। গুলি ছোড়া এবং দেশীয় অস্ত্র ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান

সংঘর্ষের খবর পেয়ে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পুলিশেরও অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
রায়পুরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, “দীর্ঘদিনের বিরোধের সূত্র ধরে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।”

প্রশাসনের পদক্ষেপ

ঘটনার পর রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় সেনানিবাসের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন—

  • গত এক বছরে রায়পুরায় ১২ জন খুন হয়েছেন।
  • ২৪ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই প্রাণঘাতি সংঘর্ষ হচ্ছে।
  • চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাদের কার্যক্রম শেষে চরাঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে।
  • জরুরি ভিত্তিতে চরাঞ্চলে সেনা ক্যাম্প স্থাপন এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো প্রয়োজন।
  • পাশাপাশি অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সন্ত্রাস দমনে সফল হওয়া সম্ভব নয়।

রায়পুরার চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপট

রায়পুরা উপজেলাটি দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীগত দাঙ্গা, চরাঞ্চলে অবৈধ বালু উত্তোলন, স্থানীয় আধিপত্য ও রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে বেশি আলোচনায়। পূর্ববর্তী বছরের বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত বা নিহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অর্থনৈতিক দখলদারি এবং চরাঞ্চলে নদীর গতিপথ ঘিরে জমি সংক্রান্ত বিবাদ এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।

কেন সহিংসতা বাড়ছে

  • গোষ্ঠীগত শত্রুতা এবং স্থানীয় ক্ষমতার লড়াই;
  • চরাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘাত;
  • অবৈধ অস্ত্রের সহজলভ্যতা;
  • নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাজন আরও তীব্র হওয়া;
  • স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ও দলীয় কোন্দল।

মানবিক ক্ষতি

এই সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্য নিহত বা আহত হওয়ায় অনেক পরিবার অস্থিরতায় পড়েছে। একই সঙ্গে শিশু ও নারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্ভাব্য সমাধান

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রায়পুরায় শান্তি ফেরাতে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরি—

  • চরাঞ্চলে সেনা ক্যাম্প স্থাপন এবং নিয়মিত যৌথ অভিযান;
  • অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় পরিসরের কার্যক্রম;
  • অবৈধ বালু উত্তোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ;
  • রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতা গড়ে তোলা;
  • প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক অংশগ্রহণের বিস্তৃত উদ্যোগ।

রায়পুরার মতো জনবহুল এলাকায় এমন সহিংসতা শুধু প্রাণহানিই নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নেও বড় বাধা। স্থানীয়দের আশা—প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে এই সহিংসতার চক্র ভেঙে আবারো শান্ত পরিবেশ ফিরে আসবে।

MAH – 14188 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button