রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত-বিতর্কিত, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ টানা ১৫তম দিনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে ঢাকায় এসে তাকে দেখতে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান।
২০২৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রোববার, বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে (পৌনে ৪টা) তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশের সময় তাকে নিরাপত্তা দেয় চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (CSF)। তার আগমনের খবরে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সংবাদমাধ্যমের তৎপরতা আরও বেড়ে যায়। যদিও দিনের অন্য সময়ের তুলনায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম।
জুবাইদা রহমানের ঢাকায় আগমন: রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম
ডা. জুবাইদা রহমান সাধারণত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন। তারেক রহমানও সেখানে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন পর তার হঠাৎ ঢাকায় আগমন এবং মায়ের মতো শ্বাশুড়ি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা উপলক্ষে হাসপাতালে যাওয়া—
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন আলোচনা ও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে—
- এটি হতে পারে পারিবারিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর।
- আবার আগামী জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর প্রতীকী মূল্যও থাকতে পারে।
- বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার ক্ষেত্রেও এই সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকে মনে করছেন।
তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য দেওয়া হয়নি।
টানা ১৫ দিনের চিকিৎসা: কী অবস্থায় আছেন খালেদা জিয়া?
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসক ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়—
- খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ডায়াবেটিসসহ কয়েকটি দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা রয়েছে।
- চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
- প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
- কিছু পরীক্ষার ফল স্থিতিশীল থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসক দল জানিয়েছে, তার শারীরিক জটিলতার ধরন অনুযায়ী
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও নিয়মিত মেডিক্যাল সাপোর্ট প্রয়োজন।
এছাড়া বিএনপি নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি জটিলতা ও প্রশাসনিক অনুমতির অভাবই বাধা হয়ে আছে।
হাসপাতালের পরিবেশ: শান্ত, তবে নিরাপত্তা কড়া
রোববার দুপুরের পর থেকে হাসপাতালের সামনে খুব একটা ভিড় দেখা যায়নি।
তবে—
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহারা দিচ্ছিলেন।
- প্রেস ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা সক্রিয়ভাবে আপডেট সংগ্রহে উপস্থিত ছিলেন।
- আগের দিনের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি।
কয়েকজন পথচারী জুবাইদা রহমানের গাড়িবহর দেখেই থমকে দাঁড়ান।
তবে প্রচলিত রাজনৈতিক উত্তাপ বা ভিড়— তা ছিল না।
বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া: দোয়া মাহফিলে ব্যস্ত কর্মীরা
দলীয় সূত্রে জানা যায়—
- ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে দোয়া মাহফিল ও মিলাদ আয়োজন করা হচ্ছে।
- বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়নেও চলছে একই আয়োজন।
- তাদের দাবি— “ম্যাডাম দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন— এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
অনেক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন,
জুবাইদা রহমানের ঢাকা সফর দলকে নতুন আশার সঞ্চার করবে।
তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নিয়মিত খোঁজখবর
লন্ডনে অবস্থান করলেও তারেক রহমান প্রতিদিন ভিডিও কনফারেন্স ও ফোন কলে—
- চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন,
- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন,
- পরিবারকে সাপোর্ট দিচ্ছেন।
পারিবারিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তাদের জন্য কঠিন একটি সময়।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতামত
কয়েকজন লিভার বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন—
- বয়স বেশি হলে এবং লিভারের জটিলতা দীর্ঘদিন ধরে চললে চিকিৎসা অনেক সময় ধীরগতির হয়।
- নিয়মিত হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসা ছাড়া রোগীর ঝুঁকি বাড়ে।
- উন্নত চিকিৎসা পেলে কিছু জটিলতা কমিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।
এই ধরনের সমন্বিত চিকিৎসার জন্য অনেক সময় বিদেশে বিশেষায়িত সেন্টারগুলো অধিক কার্যকর বলে চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন।
এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার
ডা. জুবাইদা রহমান হাসপাতালে প্রবেশের সময় দেখা যায়—
- হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে দুই স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
- সাধারণ রোগী ও স্বজনদের প্রবেশপথ আলাদা রাখা হয়েছে।
- মিডিয়ার প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,
‘‘চেয়ারপারসনের মতো ভিভিআইপি (VVIP) রোগীর নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা জরুরি।’’
জুবাইদা রহমান কতক্ষণ হাসপাতালে অবস্থান করেছেন?
সূত্র জানায়—
- তিনি প্রায় এক ঘণ্টার মতো হাসপাতালে অবস্থান করেন।
- চিকিৎসক দলের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন।
- খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা, চিকিৎসার ধাপ ও ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান।
তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
বিএনপি নেতাকর্মী বা সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলাপ করেননি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: বিএনপির সামনে অনিশ্চয়তার সময়
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে—
- দলের নেতৃত্ব কাঠামো,
- আগামী নির্বাচনী প্রস্তুতি,
- রোডম্যাপ,
- গণআন্দোলনের পরিকল্পনা—
সবকিছুই নতুন করে ভাবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
জুবাইদা রহমানের এই সফর এ পরিস্থিতিতে আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষও খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছেন।
অনেকে লিখছেন—
- ‘‘রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবিকতার জায়গায় দাঁড়িয়ে তার চিকিৎসা নিশ্চিত হোক’’
- ‘‘দেশের দুই নেত্রীই আমাদের সম্পদ’’
- ‘‘নেতিবাচক রাজনীতির অবসান ঘটুক’’
ডা. জুবাইদা রহমানের এভারকেয়ার হাসপাতালে আগমন শুধু পারিবারিক নয়;
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে তা বহুমাত্রিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটমুক্ত নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে তার প্রয়োজন—
- দীর্ঘমেয়াদি উন্নত চিকিৎসা
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
- আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেডিক্যাল সাপোর্ট
দেশের কোটি মানুষের দোয়া একটাই—
তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
MAH – 14173 I Signalbd.com



