আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচলিত নির্বাচনী সংস্কৃতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ায় প্রচারণা চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। তিনি অর্থনির্ভর রাজনীতি নয়, বরং স্বেচ্ছাসেবক টিম গড়ে নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করবেন। তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসনে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন এবং আইনে অনুমোদিত টাকার বাইরে এক টাকাও খরচ না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি এই ঘোষণা দেন। তাঁর এই উদ্যোগ দেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন ও সততার রাজনীতি
তাসনিম জারা তাঁর ফেসবুক পোস্টে বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে বিদ্যমান আইনি অসঙ্গতি এবং অসততার দিকটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনে একজন প্রার্থী আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন।
তিনি উল্লেখ করেন:
বাস্তবতা: ‘বাস্তবে আমরা দেখি, প্রায় কেউই এই আইন মানেন না। শোনা যায়, একজন প্রার্থী ২০, ৫০, এমনকি ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করেন।’
অসততার শুরু: ‘অথচ নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে বলেন, মাত্র ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন তিনি। ফলে প্রায় সবারই সংসদে যাওয়ার যাত্রাটা শুরু হয় আইন ভাঙা ও মিথ্যা বলার মাধ্যমে।’
তাসনিম জারা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, তিনি এই অসততা ও মিথ্যার রাজনীতি করবেন না। তিনি এনসিপি থেকে ঢাকা-৯ (খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা, মান্ডা) আসনে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন এবং আইনে অনুমোদিত টাকার বাইরে ১ টাকাও খরচ না করার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
অল্প বাজেটে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল
অনেকেই তাসনিম জারাকে বলেছেন, এত অল্প বাজেটে নির্বাচন করা অসম্ভব। কিন্তু তিনি প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর যে, সততা দিয়েও নির্বাচন করা সম্ভব। তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রচারণার কৌশল হলো স্বেচ্ছাসেবক টিম গড়ে তোলা এবং জনগণের শ্রম ও সময়কে কাজে লাগানো।
স্বচ্ছতা: তিনি শুধু নির্বাচনের পরই নয়, নির্বাচনের আগেই নিয়মিত জানাবেন, কত টাকা পেয়েছেন এবং কত টাকা খরচ করেছেন। সবকিছু করবেন স্বচ্ছভাবে।
দৃষ্টান্ত স্থাপন: তিনি বলেন, ‘আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করব—সততার সঙ্গে অর্থ আর পেশিশক্তির বৃত্তের বাইরে এসে নির্বাচন করা যায়।’
জনগণের অংশগ্রহণ: তিনি মনে করেন, যে কাজগুলো অন্য প্রার্থীরা টাকা দিয়ে করান, তাঁদের সেগুলো করতে হবে জনগণের সময়, শ্রম এবং অংশগ্রহণ দিয়ে।
স্বেচ্ছাসেবক টিমের ভূমিকা ও অংশগ্রহণের উপায়
তাসনিম জারা তাঁর এই ক্যাম্পেইনে সারাদেশের মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি ঢাকা-৯, দেশের অন্য যেকোনো জায়গা বা প্রবাসী হোন, আপনি এই ক্যাম্পেইনে সাহায্য করতে পারবেন।’
স্বেচ্ছাসেবক টিমে অংশগ্রহণের অসংখ্য উপায় আছে। তাসনিম জারা একটি ছোট ফরম তৈরি করেছেন, যেখানে আগ্রহীরা কিভাবে সাহায্য করতে চান, তা জানাতে পারবেন। সহায়তার সম্ভাব্য ভূমিকাগুলো হলো:
ডিজিটাল সহায়তা: কেউ গ্রাফিক ডিজাইন করতে পারেন, কেউ ভিডিও শুট বা এডিট করতে পারেন।
মাঠ পর্যায়ের কাজ: কেউ উঠান বৈঠকের আয়োজন করতে পারেন, কেউ ফান্ড সংগ্রহে সাহায্য করতে পারেন।
প্রচার ও যোগাযোগ: কেউ তাঁর সঙ্গে বাসায় বাসায় গিয়ে মানুষের কাছে তাঁদের বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাসনিম জারা চাইছেন, এবারের নির্বাচন যেন ‘আপনাদের নিজেদের নির্বাচন’ হয়ে ওঠে। তিনি একসঙ্গে টিম গড়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে ধাপে ধাপে সবাইকে যুক্ত করবেন।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্ভাবনার সীমাহীনতা
তাসনিম জারা বিশ্বাস করেন, রাজনীতিতে সততা ও জনগণের অংশগ্রহণই পারে পরিবর্তনের মূল ভিত্তি হতে। তিনি বলেন, ‘সততা দিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব, সেটা আমরা একসঙ্গে প্রমাণ করব।’
তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, ‘যদি রাজনীতি দুর্নীতি, পেশিশক্তি আর মিথ্যার বৃত্ত থেকে বের হয়ে সত্যিকারের জনগণের হাতে ফিরে আসে, তাহলে সম্ভাবনা সীমাহীন।’ তাঁর এই বক্তব্য দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ এবং তরুণ প্রজন্মকে অর্থ ও পেশিশক্তিমুক্ত রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান।
অর্থনির্ভর রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারার টাকা ছাড়া ব্যতিক্রমী নির্বাচনী প্রচারণার ঘোষণা দেশের রাজনীতিতে একটি সাহসী পদক্ষেপ। প্রচলিত নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা লঙ্ঘন এবং মিথ্যা বলার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাঁর এই অবস্থান দুর্নীতি ও পেশিশক্তিমুক্ত রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ঢাকা-৯ আসনে তাঁর এই স্বল্প বাজেটের, জননির্ভর প্রচারণা শেষ পর্যন্ত কতটা সফলতা পায়, তা দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন বার্তা দেবে।
এম আর এম – ২৫১৪, Signalbd.com



