গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় চায়নিজ কুড়াল দিয়ে আপেল মাহমুদ (৩৫) নামের এক জামায়াত নেতাকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের অভিযোগ উঠেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে পলাশবাড়ী পৌরসভার গোয়ালপাড়া এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহত জামায়াত নেতা আপেল মাহমুদকে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রশান্ত কুমার শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিস্তারিত: চায়নিজ কুড়াল ও বাঁ হাতে আঘাত
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার দিবাগত রাতে, যখন আহত জামায়াত নেতা আপেল মাহমুদ পলাশবাড়ী থেকে তাঁর বাড়ি পৌরসভার বাড়াইপাড়া এলাকায় ফিরছিলেন। গোয়ালপাড়া এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ অভিযুক্ত হাসান মিয়া চায়নিজ কুড়াল হাতে নিয়ে আপেল মাহমুদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসান মিয়া চায়নিজ কুড়াল দিয়ে আপেল মাহমুদের বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত করেন। এই হামলায় আপেল মাহমুদ চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। জনগণের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্ত হাসান মিয়া দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় আপেল মাহমুদকে উদ্ধার করে প্রথমে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
আক্রান্ত জামায়াত নেতা ও অভিযুক্তের পরিচয়
হামলার শিকার আপেল মাহমুদ পলাশবাড়ী পৌর এলাকার বাড়াইপাড়ার বাসিন্দা। তিনি পলাশবাড়ী পৌর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বায়তুলমাল সম্পাদক। তাঁর এই পদবি প্রমাণ করে তিনি জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক অঙ্গসংগঠনের একজন সক্রিয় নেতা।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত হাসান মিয়া একই পৌরসভার গোয়ালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। এই হামলার ঘটনা দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মীদের মধ্যেকার পুরনো বা নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত দেয়। এই ধরনের রাজনৈতিক সংঘাত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
পুলিশি তৎপরতা: ঘটনাস্থল পরিদর্শন, অভিযোগের অপেক্ষা
পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রশান্ত কুমার ঘটনার পর পরই সেখানে পুলিশের তৎপরতা শুরু করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।’
তবে ওসি জানান, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর রাখছি।’ পুলিশ এখন লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এই ধরনের গুরুতর হামলার ঘটনায় পুলিশকে বাদী হয়ে মামলা দায়েরের মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করছেন আইনি বিশ্লেষকরা। হামলাকারী হাসান মিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
পলাশবাড়ী উপজেলায় রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা নতুন নয়। জামায়াত ও আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের মধ্যেকার কোন্দল প্রায়শই সহিংস রূপ নেয়। এই হামলাকে অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল হিসেবে দেখছেন। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবুও ক্ষমতাসীন দলের সাবেক অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের হাতে বিরোধী দলের নেতার ওপর হামলার ঘটনা সেই নিরাপত্তার প্রশ্নকে সামনে এনেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের নৃশংস হামলা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে এলাকায় ভীতি ও অস্থিরতা তৈরির একটি চেষ্টা হতে পারে। এই ঘটনা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশকে ব্যাহত করতে পারে।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতির প্রতিক্রিয়া
আহত আপেল মাহমুদ পলাশবাড়ী পৌর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের বায়তুলমাল সম্পাদক হওয়ায় তাঁর ওপর হামলার ঘটনা সংগঠনটির অন্যান্য কর্মীদের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের স্থানীয় নেতারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে অভিযুক্ত হাসান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
তাঁরা মনে করেন, শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একজন নেতার ওপর এভাবে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে হামলা চালানো একটি কাপুরুষোচিত কাজ। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তবে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
সহিংসতা রোধ ও আইন-শৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে জামায়াত নেতা আপেল মাহমুদকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখমের ঘটনাটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ প্রমাণ করে, রাজনৈতিক কর্মী পরিচয়ে অপরাধ করার প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। পুলিশকে কেবল লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে দ্রুত হামলাকারী হাসান মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা রোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর এবং নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে।
এম আর এম – ২৫১১, Signalbd.com



