রাজনীতি

‘শাপলা কলি’ প্রতীকে ইসির নিবন্ধন সনদ গ্রহণ এনসিপির

Advertisement

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেছে। দলটির জন্য বরাদ্দকৃত প্রতীক হলো ‘শাপলা কলি’। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এই সময় তিনি নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করলে এনসিপি আন্দোলনে নামবে। একইসঙ্গে তিনি আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ)-তে আনা ‘স্ব স্ব প্রতীকে ভোট’ সংক্রান্ত সংস্কার বাতিলে চাপ প্রয়োগের তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইসিকে শক্ত অবস্থানে থাকার আহ্বান জানান।

এনসিপির সনদ গ্রহণ ও প্রতীকের বরাদ্দ

দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন সনদ হাতে পেল। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এই সনদ গ্রহণ করে।

এনসিপি তাদের ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়ে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে। নিবন্ধনের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতারা এই প্রতীক পেতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বলে জানান এনসিপি নেতা নাহিদ। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হওয়ার পরে অবশেষে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। এই প্রতীক নিয়েই দলটি বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চায় অংশ নিতে প্রস্তুত।

আরপিও সংস্কার ও ‘এক মার্কায়’ নির্বাচনের বিরোধিতা

নাহিদ ইসলাম নির্বাচন সংক্রান্ত আরপিওতে আনা ‘নিজ প্রতীকে ভোট’ সংক্রান্ত সংশোধনীকে সাধুবাদ জানান। এই সংস্কার অনুযায়ী, প্রত্যেকটি দলকে তাদের স্ব স্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এনসিপি মনে করে, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চার জন্য এই নিয়মটি প্রয়োজন—প্রত্যেকটি দলকে তার নিজস্ব প্রতীক ও নিজস্ব আদর্শে নির্বাচন করা উচিত এবং কোনো দলের সাথে সমঝোতা হলে তার প্রতীক আলাদা হওয়া উচিত।

তবে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, একটি বিশেষ দল সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে চাপ প্রয়োগ করছে এই সংস্কার বাতিল করে ‘এক মার্কায়’ নির্বাচনের জন্য। তিনি বলেন, এই সংস্কার বাতিলে চাপ সৃষ্টি এবং আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি ইসিকে আইনগতভাবে লড়াই করতে এবং এই প্রস্তাবনা থেকে সরে না আসার জন্য আহ্বান জানান। তাঁর মতে, ইসিকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে, যাতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ না হয়।

নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া এনসিপির সতর্কতা

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন এবং কমিশনকে সতর্ক করেছেন।

পক্ষপাতমূলক আচরণের হুঁশিয়ারি

নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশন যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তবে এনসিপি কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ইসির আইন বা বিধিমালা যেন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হয়, সে ব্যাপারেও তাঁরা আলাপ করেছেন।

লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে উদ্বেগ

এনসিপি নির্বাচনে অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। প্রশাসনের রদবদলে রাজনৈতিক প্রভাব আছে, ইসিকে সেটি দেখতে হবে।’ তিনি মনে করেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) বদলির বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

কালো টাকা ও হলফনামা যাচাই

এনসিপির আহ্বায়ক প্রত্যাশা করেন যে, নির্বাচন কমিশন কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, যারা কালো টাকা ছড়াবে, তাদের বিরুদ্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একইসাথে তিনি দাবি জানান, হলফনামায় যে তথ্য প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে থাকবে, সে তথ্য যাতে ইসি যাচাই-বাছাই করে এবং তথ্যে ভুল থাকলে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

গণভোট ও অপতথ্য রোধে আহ্বান

আসন্ন গণভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বলে নাহিদ ইসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গণভোটের প্রশ্ন যেন সঠিকভাবে প্রচার হয়, সেই বিষয়েও ইসিকে সতর্ক করা হয়েছে। গণভোটের প্রশ্ন সঠিকভাবে প্রচার না হলে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছাবে না।

এছাড়াও, তিনি নির্বাচনে অপতথ্য বা ভুল তথ্যের বিস্তার রোধে নির্বাচন কমিশনকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুল তথ্যের মাধ্যমে যেন ভোটাররা প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে ইসিকে প্রযুক্তিগতভাবে আরও শক্তিশালী হতে হবে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়সীমা

রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, নাহিদ ইসলাম নির্বাচন কমিশনকে সব দলের প্রস্তুতির জন্য ভালো হয় এমন সময়ে তফসিল ঘোষণার আহ্বান জানান। তাড়াহুড়ো করে তফসিল ঘোষণা করা হলে অনেক দল সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, যা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে। তিনি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

ইসির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পথ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নিবন্ধন সনদ গ্রহণ এবং তাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের কঠোর বক্তব্য প্রমাণ করে যে, দেশের রাজনীতিতে নতুন দলগুলোও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা দাবি করছে। আরপিওতে আনা সংস্কার বাতিলের বিরুদ্ধে ইসিকে শক্ত অবস্থানে থাকার আহ্বান, পক্ষপাতিত্ব না করার হুঁশিয়ারি এবং কালো টাকা ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি—সবই নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। এনসিপি মনে করে, প্রতিটি দলের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

এম আর এম – ২৪৭৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button