মুন্সিগঞ্জে মসজিদে হামলার ঘটনা
মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দেউলভোগ দয়হাটা এলাকায় অবস্থিত বায়তুল আমান জামে মসজিদে শুক্রবার সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ চলাকালীন সময়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। নামাজরত অবস্থায়, একই রাজনৈতিক দলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কমপক্ষে আটজন নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনাটি স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই বিতর্কই মূলত সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পেছনে প্ররোচনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হামলার প্রেক্ষাপট
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আওলাদ হোসেন উজ্জ্বলের মৃত শ্বশুরের জানাজার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু দয়হাটা এলাকায় আসেন।
সেসময় মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ আব্দুল্লাহর সমর্থক ও উপজেলা যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা তরিকুল ইসলাম সপুর পথরোধ করেন। পরে সপু মোটরসাইকেলযোগে জানাজাস্থলে পৌঁছান।
জানাজা শেষে যখন সপু দয়হাটা বায়তুল আমান জামে মসজিদে নামাজ পড়তে যান, তখন সাবেক যুবদল নেতা তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা মসজিদে নামাজ চলাকালীন সময়ে সপু এবং তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়ও হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এতে সপুর দু’জন সমর্থকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে মমিনুল ইসলাম ফাহিম (২০) এবং আব্দুর রহিম (৪৭) রয়েছেন।
আহতদের অবস্থা ও চিকিৎস
শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মনিরা আক্তার জানিয়েছেন, মারামারিতে আহতদের মধ্যে দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মাথায় আঘাত ছিল, তবে গুরুতর ক্ষত হয়নি। আহতরা মীর সরাফত আলী সপুর সমর্থক।
আহতরা হামলার জন্য বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শেখ মো. আব্দুল্লাহর সমর্থকদের দায়ী করেছেন। যদিও প্রার্থী নিজে মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান বলেছেন, সন্ধ্যায় সপুর গাড়ি এবং যুবদলের তরিকুল ইসলামের মোটরসাইকেল আটকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। তিনি জানান, তরিকুল বহিষ্কৃত এবং দলের সমর্থক নন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
পুলিশি পদক্ষেপ
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা চালায়। শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হুদা খান জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ হামলার পুনরাবৃত্তি রোধ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মনোনয়নপ্রাপ্ত ও মনোনয়নবঞ্চিত গোষ্ঠীর মধ্যে ফ্র্যাকশনাল রাজনীতি মারাত্মক রূপ ধারণ করছে।
মুন্সিগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বহুবার সংঘর্ষ ও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। দলীয় মনোবৃত্তি, নেতা–কর্মী নিয়োগ এবং ক্ষমতার লোভ সহিংসতার মূল কারণ।
এই ধরনের ঘটনা ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তি এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করে।
সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব
মসজিদ ধর্মীয় স্থান হলেও রাজনৈতিক সংঘর্ষের মঞ্চে পরিণত হওয়া উদ্বেগজনক। এটি ধর্মীয় অনুভূতি ও সামাজিক ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত করে।
স্থানীয় মানুষ এবং কমিউনিটি নেতারা এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য সতর্কতা ও সংহতির আহ্বান জানিয়েছেন।
আহ্বান ও সমাধান
এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ:
- দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা: মনোনয়ন, নেতা–নিয়োগ বা মতপার্থক্যকে শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সংহতির মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
- ধর্মীয় স্থানকে নিরাপদ রাখা: মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থানের রাজনৈতিক ব্যবহার রোধ করতে হবে।
- আইনশৃঙ্খলা রক্ষা: দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
- সামাজিক সংহতি: স্থানীয় কমিউনিটি, রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শান্তি বজায় রাখতে হবে।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দেউলভোগ দয়হাটা এলাকায় মসজিদে সংঘর্ষ শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এটি ধর্মীয় মর্যাদা, সামাজিক শান্তি ও মানুষের নিরাপত্তার জন্য একটি সংকেত।
দলীয় বিভাজন ও সহিংসতা unchecked থাকলে সমাজে ভীতি, অসহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। তাই দলীয় অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং ধর্মীয় স্থানগুলোর নিরাপত্তা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
MAH – 14034 I Signalbd.com
