রাজনীতি

‘আমাকে যারা চেনেনি তারা মাটির নিচে বসবাস করে, আমার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে: শাহাজাহান

Advertisement

প্রশাসনকে ‘আয়ত্ত্বে আনার’ বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় আসা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য এবং চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরী আবারও নতুন বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সম্প্রতি তার দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তাকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়।

ভিডিওতে শাহাজাহান চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়,

‘খবরদার, খবরদার, খবরদার। আমার নাম শাহজাহান চৌধুরী। আমাকে যারা চেনেনি তারা এখনও মাটির নিচে বসবাস করে। আল্লাহর মেহেরবানি, আমার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে এ রকম মর্যাদা দিয়েছেন।’

তিনি কাউকে উদ্দেশ্য করে সতর্ক করে দেন, ‘উল্টাপাল্টা করিও না। অবশ হয়ে যাবে। আমি যদি চোখের পানি ফেলি, অবশ হয়ে যাবে।’ জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের তুলাতলী এলাকায় গণসংযোগকালে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

পূর্ববর্তী ‘প্রশাসনকে আয়ত্ত্বে আনার’ বিতর্ক

শাহাজাহান চৌধুরীর সর্বশেষ এই বক্তব্যের আগে প্রশাসনের বিষয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্যের পটভূমি।

বিতর্কিত সমাবেশ: গত শনিবার (২২ নভেম্বর) চট্টগ্রামের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের নির্বাচনী দায়িত্বশীলদের এক সমাবেশে শাহাজাহান চৌধুরী প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।

বিতর্কিত মন্তব্য: তিনি বলেছিলেন, ‘যার যার নির্বাচনী এলাকায়, প্রশাসনে যারা আছে, তাদের অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’

প্রতিক্রিয়া: তার এই বক্তব্যের পর পুলিশের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয় এবং এটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

দলীয় শোকজ: এই বক্তব্যের জেরে গত মঙ্গলবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সই করা এক নোটিশে শাহাজাহান চৌধুরীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দেওয়া হয়। তাকে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক ত্যাগ ও ব্যক্তিগত কষ্টের বর্ণনা

বিতর্কের মাঝে শাহাজাহান চৌধুরী তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং ব্যক্তিগত ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরেন।

কারাবাসের ইতিহাস: কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি তার রাজনৈতিক ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। ১৮ বছরের মধ্যে ৯ বছর জেল খেটেছি।’

অর্থনৈতিক অনীহা: তিনি দাবি করেন, তিনি ‘টাকাপয়সা চাই নাই, ধনদৌলত, কাপড়চোপড়, পরিবারকে চাইনি’। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি ‘দুইবারের এমপি’ হওয়া সত্ত্বেও ‘কোনোদিন এক কড়া জমিও নেননি’

জনগণের দুয়ারে: তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের দুয়ারে আজকে এসেছি। আপনারা দোয়া করবেন।’

চরতির প্রতি সম্মান: চরতি ইউনিয়নকে তিনি তার শায়েখ ও ওস্তাদ মাওলানা মমিনুল হক চৌধুরীর জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করে এই এলাকার মাটিকে সম্মান জানানোর কথা বলেন।

নির্বাচনী মার্কা ও রাজনৈতিক বার্তা

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় তার নির্বাচনী প্রতীক ও রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে শাহাজাহান চৌধুরীর ঘোষণা।

একক মার্কা: তিনি ঘোষণা করেন, ‘এখানে আর কোনও মার্কা নাই, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মার্কা একটা, সেটা হলো দাঁড়িপাল্লা।’

রাজনৈতিক শূন্যতা: তিনি বলেন, ‘এখানে কোনও রাজনীতি নাই।’ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, এই এলাকায় তার দলের প্রতীকের কোনো বিকল্প নেই।

দাঁড়িপাল্লার গুরুত্ব: দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রতীক, যা নিয়ে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন।

“আমার নাম শাহজাহান চৌধুরী। আমাকে যারা চেনেনি তারা এখনও মাটির নিচে বসবাস করে। আল্লাহর মেহেরবানি, আমার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে।”- জামায়াত নেতা শাহাজাহান চৌধুরী

বিতর্কিত নেতার ভবিষ্যৎ

জামায়াত নেতা শাহাজাহান চৌধুরীর একের পর এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং অলৌকিক ক্ষমতা দাবি করার মতো উক্তিগুলো কেবল রাজনৈতিক নয়, আইনি ও নৈতিক প্রশ্নও তুলেছে। বিশেষ করে যখন তিনি দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন, তখন তার এই নতুন বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তার এই মন্তব্যগুলো নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। জামায়াতকে এখন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে: হয় তাকে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে, নয়তো তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করতে হবে। তার মতো একজন জ্যেষ্ঠ নেতার এমন বক্তব্য গণতন্ত্র ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য শুভকর নয়। তার এই মন্তব্যগুলো দেশের আইনের শাসন, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এম আর এম – ২৩৯৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button