বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন এক সেবা চালু করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে “ভূমিকম্প পরবর্তী ভবন সুরক্ষা স্ক্যান”। এই সেবার মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ভবন, বাসা, দোকানঘর, অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনার ঝুঁকি নির্ধারণ করা হবে।
দলের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভেরিফায়েড প্রোফাইলে পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভূমিকম্প বা কম্পনের পর ভবনগুলোতে যদি ফাটল, হেলেপড়া, বেঁকে যাওয়া, অস্বাভাবিক শব্দ বা কম্পন দেখা যায়, তাহলে অভিজ্ঞ সিভিল ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ একটি দল তা পরীক্ষা করবে।
এই সেবার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের জন্য ভবনের ঝুঁকি সনাক্ত করা, এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে ভবন নিরাপদ করা।
সেবার বিস্তারিত কার্যক্রম
বাংলাদেশ জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সেবার আওতায় ভবন মালিকরা নিম্নলিখিত সুবিধা পাবেন:
- প্রাথমিক ঝুঁকি মূল্যায়ন:
বিশেষজ্ঞরা ভবনের দৃশ্যমান ক্ষতি ও সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করবেন। - সাইট পরিদর্শন:
প্রয়োজনমতো অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা সরাসরি সাইটে গিয়ে ভবনের অবস্থা নিরীক্ষণ করবেন। - দৃশ্যমান ক্ষতি এবং বিপদের চিহ্ন শনাক্তকরণ:
ফাটল, হেলেপড়া দেয়াল, ছাদের অবস্থা, আর্থিক ঝুঁকি ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হবে। - নিরাপত্তা নির্দেশনা ও জরুরি করণীয়:
ঝুঁকি সনাক্তকরণের পর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরামর্শ এবং জরুরি পদক্ষেপের সুপারিশ প্রদান করা হবে। - ভিডিও ডকুমেন্টেশন ও প্রাথমিক রিপোর্ট:
ভবনের ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে। - এক্সপার্ট প্যানেলের যাচাইকৃত ফাইনাল রিপোর্ট:
প্রয়োজনে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মাধ্যমে চূড়ান্ত রিপোর্ট যাচাই করা হবে, যাতে ভবন মালিক ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন।
কেন এই সেবার প্রয়োজন
বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বিশেষ করে ঢাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে ঘনবসতি ও পুরোনো অবকাঠামোর কারণে ভূমিকম্পের প্রভাব বেশি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং ভূতাত্ত্বিকদের পরামর্শ অনুযায়ী:
- ঢাকা শহরের পুরোনো ভবনগুলোর বেশিরভাগই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।
- বড় শহরগুলোতে ভূমিকম্প হলে ধ্বংসযজ্ঞের সম্ভাবনা বেশি।
- আগাম সতর্কতা এবং প্রাথমিক ঝুঁকি মূল্যায়ন ভবন মালিকদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জামায়াতের উদ্যোগ সঠিক সময়ে মানুষের নিরাপত্তার জন্য কার্যকর ভূমিকা নিতে সক্ষম হবে।
জামায়াতের প্রকৌশল বিভাগের ভূমিকা
বাংলাদেশ জামায়াতের প্রকৌশল বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সিভিল ও স্ট্রাকচারাল প্রকল্পে কাজ করছে। তাদের অভিজ্ঞ দলগুলো বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি এবং ভবনের দুর্বলতা সনাক্ত করতে সক্ষম।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেবার জন্য নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা শুধু পেশাগত জ্ঞানই ব্যবহার করবেন না, বরং মানুষের নিরাপত্তা এবং ভবনের স্থায়িত্বকে প্রাধান্য দেবেন।
সেবার প্রাথমিক লক্ষ্য
- সাধারণ মানুষকে সচেতন করা:
মানুষের কাছে এই সেবার মাধ্যমে ভবনের ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। - বাণিজ্যিক ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা:
দোকান, অফিস এবং কমার্শিয়াল ভবনগুলোর ঝুঁকি কমানো। - জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা:
ভবন মালিকরা যদি প্রাথমিক ঝুঁকি রিপোর্টে সমস্যা দেখেন, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
বিনামূল্যে সেবা প্রদান
জামায়াত এই সেবা পুরোপুরি বিনামূল্যে প্রদান করছে। মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মানুষের জীবন রক্ষা করা এবং ভবনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “ভূমিকম্প বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় বিষয়। এই সেবা সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে চালু করা হয়েছে।”
প্রাথমিক সেবা কিভাবে পাওয়া যাবে
- ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এই সেবা প্রদান করা হবে।
- আগ্রহী ভবন মালিকরা জামায়াতের অফিস বা নির্দিষ্ট হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারবেন।
- সাইট ভিজিটের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করা হবে।
- প্রাথমিক মূল্যায়নের পর প্রয়োজন অনুযায়ী ফলো-আপ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ভবনের জন্য প্রাথমিক ঝুঁকি মূল্যায়ন অপরিহার্য। কারণ:
- অনেক পুরনো ভবনের ভিতরের কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে।
- সঠিক পরামর্শ না থাকলে ভবন মালিকরা সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।
- কম্পন বা ফাটলের প্রথম লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব না দিলে ভবনের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে।
বাংলাদেশ জামায়াতের এই উদ্যোগে এই সমস্যা সমাধান হবে।
ভূমিকম্প পরবর্তী ভবন সুরক্ষা স্ক্যান সেবা মানুষের জীবন রক্ষা, ভবন স্থায়িত্ব নিশ্চিত এবং ঝুঁকি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই সেবার মাধ্যমে শুধুমাত্র ঢাকা নয়, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলও উপকৃত হবে। ভবন মালিকরা বিনামূল্যে ঝুঁকি মূল্যায়ন, নিরাপত্তা পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় রিপোর্ট পেয়ে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
জামায়াতের প্রকৌশলীরা সেবা দিচ্ছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যেখানে প্রযুক্তি, অভিজ্ঞতা এবং সতর্কতা মিলিয়ে ভবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় এই ধরনের পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
MAH – 14017 I Signalbd.com



