রাজনীতি

ধানের শীষ ছাড়া নির্বাচন, এজেন্ট না দেওয়ার হুঁশিয়ারি

Advertisement

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নূর-মুজাহিদ স্বপন বলেছিলেন, “আমরা ধানের শীষের বাইরের কেউ নই। ধানের শীষের বাইরে যদি কেউ নির্বাচন করার চিন্তা করে, তাহলে কোনো কেন্দ্রে তারা এজেন্ট দিতে পারবে না।”

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চাটমোহরে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত গণমিছিল শেষে বালুচর খেলার মাঠে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। তার এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর এবং ফরিদপুরসহ পাবনা-৩ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

মনোনয়ন বিতর্কে উত্তেজনা

পাবনা-৩ আসনে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে বিএনপি মনোনীত করেছে। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি এবং স্থানীয়দের মধ্যে ‘বহিরাগত’ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় নেতারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন যে, স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত।

মনোনয়ন না পাওয়ায় সাবেক এমপি কে এম আনোয়ারুল ইসলাম এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসাদুল ইসলাম হীরা একে-অপরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় চলছে উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক চাপে ভুগছে বিএনপি।

গণমিছিল ও সমাবেশ

শনিবার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের নেতাকর্মীদের নিয়ে গণমিছিল আয়োজন করেন মনোনীত প্রার্থী হাসান জাফির তুহিন। মিছিল শেষে বালুচর খেলার মাঠে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তুহিনসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নূর-মুজাহিদ স্বপন ধানের শীষের বাইরে নির্বাচন করতে চাওয়া স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশ্য হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন,

“কথা একটাই। আমরা ধানের শীষের বাইরের কেউ নই। ধানের শীষের বাইরে যদি কেউ নির্বাচন করার চিন্তা করে, আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, কোনো কেন্দ্রে তারা এজেন্ট দিতে পারবে না। ধানের শীষের বাইরে কোনো লোক থাকবে না।”

স্বপন আরও বলেন, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যেন না যায়। তার লক্ষ্য সব সময় দলের নেতাকর্মীদের এক সঙ্গে রাখা।

স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া

পাবনা-৩ এর স্থানীয় নেতারা স্বপনের এই বক্তব্যকে সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, স্বপনের হুঁশিয়ারি মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাওয়া হয়েছে।

পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকার বলেন,

“নূর-মুজাহিদ স্বপন এত কাঁচা রাজনীতিবিদ নন। তার বক্তব্য ভুলভাবে বোঝানো হচ্ছে। তিনি অন্য কিছু বোঝাতে চেয়েছেন। বিএনপির নেতা হিসেবে তিনি সব সময় দলের ঐক্য রক্ষার চেষ্টা করেন।”

বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন

বিভাজন বিষয়টি এখন পাবনা-৩ আসনের বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনোনয়ন বিতর্কে দলের অভ্যন্তরীণ তিক্ততা বেড়ে গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজস্বভাবে জনসভা ও কর্মসূচি চালাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনের আগে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যকে কতটা প্রভাবিত করবে তা দেখা বাকি।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের মনোনয়ন বিতর্ক স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি, নির্বাচনী আচরণে কেন্দ্রীয় নেতাদের দিক নির্দেশনার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ধানের শীষ ও বিএনপির রাজনীতি

বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতীক, যেমন ধানের শীষ, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতীক শুধু ভোটারদের জন্য পরিচিতি নয়, এটি দলের রাজনৈতিক পরিচয় ও ঐক্য বজায় রাখারও প্রতীক।

স্বপনের বক্তব্যের মূল সুর হলো দলের মধ্যে ভাঙন রোধ করা। তিনি মনে করছেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ গেলে তা দলের শৃঙ্খলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া

মনোনীত প্রার্থী হাসান জাফির তুহিন সমাবেশে বলেন, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মনে করছেন, তারা স্থানীয় জনতার চাহিদার প্রতিফলন এবং দলের নীতিমালা অনুযায়ী ভোটে অংশ নেওয়ার অধিকার রাখেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের হুঁশিয়ারি স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনী এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তবে এটি দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা যায়।

পাবনা-৩ আসনে এই মনোনয়ন বিতর্ক ভবিষ্যতে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং স্থানীয় নেতাদের সমর্থন প্রার্থীর নির্বাচনী শক্তিকে বৃদ্ধি বা হ্রাস করতে পারে।

বিস্তারিত মনোনয়ন বিতর্ক, গণমিছিল, সমাবেশ এবং নেতাদের হুঁশিয়ারি সব মিলিয়ে পাবনা-৩ আসনের রাজনীতিকে উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে। দলীয় ঐক্য রক্ষার প্রচেষ্টা, স্থানীয় জনতার প্রত্যাশা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কার্যক্রম—এই তিনটি ফ্যাক্টর আগামী নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুরে এখন রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়ে গেছে। দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা, মনোনয়ন বিতর্ক ও নেতাদের হুঁশিয়ারি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন মাত্রা যোগ করছে।

MAH – 13940 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button