আঞ্চলিক

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার

Advertisement

 গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে সহিংস ঘটনার পর জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর ও নিরাপত্তা হুমকির প্রেক্ষিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট মোতায়েনসহ নেওয়া হয়েছে সার্বক্ষণিক নজরদারির পদক্ষেপ।

প্রশাসনের কড়া নজরদারি

১৬ জুলাই বিকালে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি হামলার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালায়। কারাগারের নিরাপত্তা বাড়াতে এখন একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং বাহিনীর সদস্যরা তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে টহল দিচ্ছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কারাগারে থাকা বন্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান লক্ষ্য। কেউ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি এবং কারাগারের ভেতরে কোনো বিশৃঙ্খলার খবর নেই।

হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট: সহিংসতা ও সংঘর্ষের দিনভর ঘটনা

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর “জুলাই পদযাত্রা” কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দিনভর সহিংসতা ও দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত অংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এনসিপি সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাব সদস্যরা চেষ্টা করেও হামলাকারীদের প্রথমে থামাতে পারেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় বিকেল ৪টার দিকে জেলা কারাগারে হামলা চালানোর চেষ্টা হয়।

কারাগারে হামলার ঘটনা: কী ঘটেছিল সেসময়?

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ হঠাৎ করে কারাগারের সামনের দিকে জড়ো হয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। গেটে ভাঙচুর চালানো হয় এবং ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা হয়। নিরাপত্তা রক্ষীরা বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত কয়েকজন কারারক্ষী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছোড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। এরপর দ্রুত সেনা টহল শুরু হয় এবং কারাগারের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনায় কেউ পালিয়ে যায়নি এবং বন্দিদের অবস্থান স্বাভাবিক রয়েছে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, কারাগারসহ আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ১৪৪ ধারা জারি করে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে গোপালগঞ্জ শহরে।

জেলা প্রশাসক এক জরুরি ব্রিফিংয়ে বলেন, “কারাগারে কোনো নিরাপত্তা শিথিলতা নেই। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এছাড়া, গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল, ডিসির বাসভবন, পৌর পার্ক, আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া

কারাগার এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি গোপালগঞ্জে বহু বছর দেখা যায়নি। অনেকেই আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় লোক চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, “কারাগারের সামনে গোলমালের সময় আমরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাই। এখনো পুরো এলাকা থমথমে।”

এনসিপির পক্ষ থেকে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, সরকারের নিষ্ক্রিয়তাই সহিংসতা বাড়ার জন্য দায়ী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও প্রশাসনের কৌশল

পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। প্রতিটি কারারক্ষীকে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং অতিরিক্ত বাহিনী স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, “আমরা কারাগার চত্বরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছি। কোনো ধরনের গুজব বা উত্তেজনাকে গুরুত্বসহকারে নজরে রাখা হচ্ছে।”

প্রশাসন ধারণা করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।

সারসংক্ষেপ  


গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ১৬ জুলাই দুপুরের পর থেকে গোপালগঞ্জে সহিংস ঘটনার সূত্র ধরে জেলা কারাগারের চারপাশে ভাঙচুর ও হামলার চেষ্টার পর প্রশাসনের নির্দেশে কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা কারাগার এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রশাসন কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলার ঘটনা প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য করেছে। অতীতে এমন হামলা বিরল হলেও এবারকার সহিংসতা আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।তবে বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে প্রশাসনের দাবি।

এম আর এম – ০৩৯৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button