রাজনৈতিক অস্থিরতায় নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: রুমিন ফারহানা
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা মন্তব্য করেছেন যে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন ও ভয়-ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা দাবি-দাওয়া নির্বাচনকে ঘিরে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। জনসভাটি বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পানিশ্বর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন আয়োজন করে।
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার মূল কারণ
রুমিন ফারহানা জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জনমনে প্রশ্ন ওঠার পেছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করেন। তাঁর মতে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থান এই অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই একটি ভয়-ভীতির জায়গা আছে। কারণ:
১. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি: দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল নয় বলে তিনি মনে করেন। ২. বিভিন্ন দলের দাবি: বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সামনে আসছে। কেউ বলছে, নিম্নকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি না হলে তারা নির্বাচন করবে না।
৩. গণভোটের দাবি: আবার কেউ কেউ বলছে, নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
৪. দল নিষিদ্ধের দাবি: এমনকি কেউ কেউ জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ না করা হলে নির্বাচনে যাবে না বলেও দাবি করছে।
এসব পরস্পরবিরোধী দাবি ও অস্থিরতার কারণে নির্বাচন ঘিরে একটি তীব্র অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সুযোগ-সুবিধা ছাড়তে অনীহা ও জনমনের উদ্বেগ
রুমিন ফারহানা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন, যা সাধারণ মানুষের মনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা সরকারে না থেকেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।
এই সুবিধাভোগী মহলটি তাদের পাওয়া সুযোগ-সুবিধা সহজে ছাড়তে রাজি নয়। তাঁর মতে, এটাই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। এই মন্তব্যটি ক্ষমতা ও প্রভাবের অপব্যবহার এবং ক্ষমতার পালাবদলে এই মহলটির প্রভাব হারানোর ভয়কে ইঙ্গিত করে। এটি জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক সুবিধার সুষ্ঠু বন্টন নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তারেক রহমানের ৩১ দফা: আন্দোলনের মূলমন্ত্র
রুমিন ফারহানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার কথা তুলে ধরেন। পানিশ্বর ইউনিয়ন বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করেছিল মূলত এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে।
বিএনপির এই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জানান, এই ৩১ দফার উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা এবং সমাজের সার্বিক কাঠামোর সংস্কার ও মেরামত করা। নির্বাচনের অনিশ্চয়তার মধ্যে এই ৩১ দফা জনগণের কাছে দলের দীর্ঘমেয়াদী ভিশন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিএনপি। জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরাও এই কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন: “জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই একটি ভয়-ভীতির জায়গা আছে। কারণ বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সামনে আসছে… তাই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।”
মনোনয়ন নিয়ে ব্যক্তিগত অবস্থান ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
সাংবাদিকরা রুমিন ফারহানার নিজ নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করেন।
জবাবে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থানের চেয়ে দল ও জনগণের সিদ্ধান্তের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর ধরে তিনি মজলুম ও নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে গেছেন। তিনি সবসময় দল ও দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। তাই তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সিদ্ধান্তের ওপর। তিনি বলেন, “তাদের সিদ্ধান্তই হবে আমার সিদ্ধান্ত। তাদের সিদ্ধান্তে নির্ভর করবে আমার রাজনীতি কোন পথে যাবে।” এই মন্তব্যটি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গতিপথ নির্ধারণে স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়।
জনসভার অন্যান্য বক্তাদের প্রতিক্রিয়া
পানিশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুস্তাফা মেম্বার, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির মুন্সি প্রমুখ।
বক্তারা সকলেই নির্বাচন নিয়ে জনমনে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা ও ভয়ের বিষয়ে রুমিন ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তাঁরা দ্রুত একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান এবং তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য জনমত তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক চাপ
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানার বক্তব্য দেশের নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক চাপের চিত্র তুলে ধরে। বিভিন্ন দলের পরস্পরবিরোধী দাবি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা জনমনে নির্বাচন নিয়ে যে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, তা এখন স্পষ্ট। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সরকারি সুযোগ-সুবিধাভোগী মহলের অনীহা এই অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, রুমিন ফারহানা তারেক রহমানের ৩১ দফার ওপর গুরুত্ব দিয়ে জনগণের কাছে দলের সংস্কারের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। নির্বাচন শেষ পর্যন্ত কোন পথে গড়ায়, তা অনেকাংশে নির্ভর করবে এসব রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং জনমনের উদ্বেগ কতটুকু প্রশমিত হয় তার ওপর।
এম আর এম – ২৩৩৩,Signalbd.com



