রাজনীতি

জামায়াত ফ্যাসিবাদ বিরোধী কার্যক্রমে দৃশ্যমান কিছুই করেনি: ফখরুলের মন্তব্য

Advertisement

জাতীয় রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জামায়াত গত এক দশক ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কার্যক্রমে দৃশ্যমান কিছুই করেনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “জামায়াত দীর্ঘদিন ধরেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বললেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ বা দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড নেই। তারা শুধু কথায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী, কিন্তু বাস্তবে জনগণের জন্য কিছুই করেনি।”

তিনি আরও যোগ করেন, ঐকমত্য কমিশন যে পিআরের বিষয়ে উল্লেখ করেছে, তা দেশের সাধারণ জনগণ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে না। এমনকি, বহু বছর ধরে পিআরের কথা বলার পরও এখন জামায়াত তার সুর নরম করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি মনে করেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও নিজের স্বার্থ হাসিলের অংশ মাত্র।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বারোপ

মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশে যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকে, তাহলে সবার অধিকার সুরক্ষিত হবে। ছাত্র ও জনগণ যে পরিবর্তনের সূচনা করেছে, সেটি কাজে লাগানো আমাদের দায়িত্ব। আমরা চাই, দেশে এমন একটি অবস্থা তৈরি হোক যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। এমন ব্যবহার দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সামাজিক সংহতির জন্য হুমকিস্বরূপ।

রাজনীতিতে ধর্মীয় পরিচয় ও রাজনৈতিক স্বার্থ

ফখরুলের বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ন দিক হলো, ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা নিয়ে তার সতর্কবার্তা। তিনি বলেন, “ধর্মের নামে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা দেশে বিভাজন সৃষ্টি করছে। আমরা চাই না, যে দেশে ধর্মের ব্যবহার কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”

বিগত বছরগুলোতে জামায়াতের কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা মাঝে মধ্যে ধর্মীয় পরিচয়কে ভোট ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করেছে। ফখরুল এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উত্থাপন করেছেন, যা রাজনৈতিক সমালোচকদের মধ্যে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে।

জাতীয় রাজনীতিতে ছাত্র-জনতার ভূমিকা

ফখরুলের বক্তব্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ভূমিকা। তিনি উল্লেখ করেন, “দেশে ছাত্র-জনতা যে পরিবর্তন এনেছে, তা ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। তাদের উদ্যোগ ও আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশের স্বপ্ন দেখছি। এটি একটি সুযোগ, যা কাজে লাগানোই আমাদের দায়িত্ব।”

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলোকে উচিত ছাত্র-জনতার এ পরিবর্তনকে সমর্থন করা এবং দেশের জন্য সুফলবতী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান ও নির্বাচনী প্রস্তুতি

ফখরুলের অভিযোগ অনুযায়ী, জামায়াত দীর্ঘ সময় ধরে শুধু নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েছে এবং বাস্তবিক কোনো ফ্যাসিবাদ বিরোধী কার্যক্রম হাতে নেনি। তিনি বলেন, “জামায়াতের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, তারা শুধুমাত্র নির্বাচন জয় করতে চায়। জনগণের জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এটি দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”

রাজনীতিবিদরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার এ ধরনের মতবিরোধ শুধুমাত্র দলগত রাজনীতি নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

ফখরুলের বক্তব্যের রাজনৈতিক প্রভাব

ফখরুলের এই মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক মহলে নতুনভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ও সচেতনতার বিষয়ও।

একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “ফখরুলের বক্তব্য স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করছে যে, বিএনপি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সমাজের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে অবস্থান করছে। এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক সমীকরণের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।”

গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও দায়িত্বশীল রাজনীতি

ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, দেশের রাজনীতিতে দায়িত্বশীল ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কতটা জরুরি। তিনি বলেন, “প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে উচিত জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্ম বা সংস্কৃতি ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের যুবক ও ছাত্র-জনতার আন্দোলন এ প্রসঙ্গে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

তিনি আরও বলেন, জনগণ যদি সচেতন ও সক্রিয় থাকে, তাহলে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা সম্ভব। এটি শুধু রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব নয়, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক সতর্কবার্তা ও জনগণের ভূমিকা

মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য শুধু জামায়াতের সমালোচনা নয়, বরং দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি একটি সতর্কবার্তা। তিনি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছেন যে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় পরিচয় বা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কোনো ক্ষতি গ্রহণযোগ্য নয়।

ফখরুলের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের যুবক ও ছাত্র-জনতার ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উদ্যোগ ও আন্দোলন ভবিষ্যতে দেশকে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও ফখরুলের এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অবস্থান পুনঃমূল্যায়ন করতে বাধ্য করতে পারে।

ফখরুলের মন্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের অধিকার রক্ষা, ধর্মের রাজনৈতিক শোষণ এড়িয়ে চলা এবং ছাত্র-জনতার পরিবর্তনকে কাজে লাগানো অপরিহার্য।

MAH – 13922 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button