রাজনীতি

জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনে করছেন না মিজানুর রহমান আজহারী

Advertisement

জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ও স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ী-ডেমরা) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন দিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খবর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, ড. মিজানুর রহমান আজহারীর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার খবরটি পুরোপুরি গুজব ও ভিত্তিহীন। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই খবরকে অসত্য বলে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং এ ধরনের ভুয়া তথ্য প্রচারের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জামায়াতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও বক্তব্য

বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসান মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে মনোনয়ন দেওয়ার খবরটি ভুয়া। এমনটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই।”

তিনি আরও বলেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া রাজনৈতিক প্রার্থীতা নিয়ে কোনো তথ্য গ্রহণ না করার জন্য জামায়াত দেশের জনগণকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই যেকোনো খবর গ্রহণ বা প্রচারের আগে তার সত্যতা নিশ্চিত করা জরুরি। জামায়াতের এই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য সমস্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছে।

যেভাবে ছড়াল আজহারীর প্রার্থীতার গুজব

মঙ্গলবার রাত থেকে এবং বুধবার দুপুরের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হচ্ছিল যে, ড. মিজানুর রহমান আজহারী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। কেউ কেউ তাকে ঢাকা-৫ আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন।

গুজব ছড়ানোর পেছনে দুটি বিষয় প্রধানত কাজ করেছে বলে জানা গেছে। প্রথমত, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর একটি বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ছবিটিকে ব্যবহার করে অনেকে ধারণা করেন যে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনের জন্য আজহারীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, একটি স্থানীয় গণমাধ্যম (প্রতিযোগীর কন্টেন্ট অনুযায়ী) এই খবর প্রকাশ করে যে, জামায়াতের আমির আনুষ্ঠানিকভাবে আজহারীর প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন, যদিও পরে দলীয় সূত্র থেকে এটি নাকচ করা হয়।

ঢাকা-৫ আসনের রাজনৈতিক গুরুত্ব

ঢাকা-৫ আসনটি (যাত্রাবাড়ী–ডেমরা) রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এবং ঐতিহ্যগতভাবে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে শক্তিশালী প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে সকল দলেই জল্পনা ছিল। ইসলামী বক্তা হিসেবে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায়, তাকে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দেখার আকাঙ্ক্ষা ছিল দলটির তরুণ কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে।

বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী এই আসনে কামাল হোসেন নামের একজন প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। তবে আজহারীর নাম সামনে আসায় দলের নীতিনির্ধারকরা আসনটিতে নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনায় বসছেন বলেও বিভিন্ন মহল থেকে খবর আসছিল। তবে জামায়াতের মিডিয়া বিভাগের প্রধানের ঘোষণার পর আপাতত সেই গুঞ্জন থেমে গেল।

ড. মিজানুর রহমান আজহারীর বর্তমান অবস্থান ও কার্যক্রম

ড. মিজানুর রহমান আজহারী বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি সাধারণত দেশ-বিদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় দাওয়াতি কাজে ব্যস্ত থাকেন। তিনি বক্তৃতায় সমসাময়িক বিষয়গুলো আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার জন্য সুপরিচিত।

বিভিন্ন সময় তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন। কিছু গণমাধ্যম (প্রতিযোগীর কন্টেন্ট অনুযায়ী) ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ব্যক্তিগত কারণ এবং দাওয়াতি কাজে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত (নির্বাচন না করার) নিয়েছেন, যদিও জামায়াত তাকে মনোনয়ন দেয়নি বলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। তার মূল ফোকাস ধর্মীয় বক্তৃতা এবং শিক্ষামূলক কাজে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়, এমন ধারণা তার সমর্থকদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

গুজব ছড়ানোর প্রভাব ও বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের ঠিক পূর্বে এই ধরনের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গুজব ছড়ানো একটি সাধারণ প্রবণতা। এর প্রধান উদ্দেশ্য হতে পারে—ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং দলগুলোর প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা। ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মতো একজন জনপ্রিয় স্কলারের নাম জড়িয়ে খবর ছড়িয়ে পড়লে তা ভোটারদের একটি অংশের মধ্যে দ্রুত আগ্রহ সৃষ্টি করে।

মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ধরনের তথ্যের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে, যখন একটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন নিশ্চিত না করে, তখন শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে খবর প্রচার করা উচিত নয়। গুজব নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মিডিয়া বিভাগের দ্রুত ও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া জরুরি।

এহসান মাহবুব জুবায়েরের মন্তব্য

“ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে মনোনয়ন দেওয়ার খবরটি ভুয়া। এমনটি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এ ধরনের ভুয়া তথ্য প্রচারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া রাজনৈতিক প্রার্থীতা নিয়ে কোনো তথ্য গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।” — এহসান মাহবুব জুবায়ের (সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী)

জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীকে ঢাকা-৫ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন দেওয়ার খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে নাকচ করে দিয়েছে দলটি। জামায়াতে ইসলামীর এই ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজবের অবসান ঘটিয়েছে। যদিও আজহারীর মতো একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নির্বাচনে অংশ নিলে তার প্রভাব কেমন হতো, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ছিল, তবে আপাতত তার মূল মনোযোগ ধর্মীয় ও দাওয়াতি কাজেই থাকছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তাদের প্রার্থীতা নিয়ে সঠিক তথ্য প্রদানের এই উদ্যোগ গুজব নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভুল তথ্যের প্রচার রোধে সহায়ক হবে।

এম আর এম – ২৩০১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button