চুয়াডাঙ্গায় দাঁড়িপাল্লা বা বিলবোর্ড টাঙানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে রয়েছে মহিলা ইউপি সদস্য ও কয়েকজন স্থানীয় যুবক।
আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলমডাঙ্গা পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম কনক, সদস্য সাজাহান ও আলিম, কুমারী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাইজেল হোসেন, ১ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য রোকসানা খাতুন এবং তার স্বামী রাশিদুল ইসলাম।
জামায়াত পক্ষের আহতদের মধ্যে রয়েছেন হারুনের ছেলে মুরাদ আলী, মাহাতাবের ছেলে আরিফ, পলাশের ছেলে লাল্টু, সাদেক আলীর ছেলে উল্টু এবং তার মেয়ে ফাতেমা খাতুন।
ঘটনার সময় দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। আহতদেরকে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের বক্তব্য
আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রোকন অভিযোগ করেন, “জামায়াত পরিচয়ে যুবলীগের কিছু কর্মী পরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের ৬জন নেতাকর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এটি রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পিত হামলা।”
অপরদিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির শফিউল আলম বকুল বলেন, “দাঁড়িপাল্লা টাঙাতে গেলে বিএনপির মহিলা ইউপি সদস্য ও তার স্বামী বাধা দেন। এরপর বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।”
পুলিশ ব্যবস্থা ও পরিস্থিতি
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আছে, তাই পরিস্থিতি মনিটরিং চলছে।”
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের আরেক সংঘর্ষ
একই দিনে দুপুরে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের দর্শনা থানার মদনা-পারকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামেও একটি তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত বিলবোর্ড স্থাপনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্রে জানা যায়, সকালে শুরু হওয়া বিরোধের জেরে দুপুরে সংঘর্ষের ফলে দুইজন আহত হন। আহতরা হলেন জামায়াত সমর্থক খাজা এবং বিএনপি সমর্থক আজিজুল ইসলাম।
দর্শনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সুলতান মাহমুদ বলেন, “বিলবোর্ড স্থাপনকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
চুয়াডাঙ্গা জেলা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। স্থানীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সামান্য বিরোধও সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। আলমডাঙ্গা ও দর্শনা উপজেলাগুলি রাজনৈতিক দিক থেকে বিতর্কিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।
বুধবারের সংঘর্ষ মূলত নির্বাচনী প্রতীক ও বিলবোর্ড টাঙানোর বিষয়কে কেন্দ্র করে সংঘটিত হলেও, এর পেছনে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বৈরিতা কাজ করেছে। বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা একে অপরকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিচ্ছেন।
স্থানীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি
শ্যামপুর গ্রামের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদকর্মীদের জানান, “দুই পক্ষই বিলবোর্ড টাঙানোর জন্য প্রচণ্ড লড়াই করছে। এতে সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে।” স্থানীয়রা আরও বলেন, “পুলিশি নজরদারি থাকলেও এলাকায় ছোট ছোট সংঘর্ষ এখনো নিয়মিত ঘটছে।”
আইন ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “রাজনৈতিক সংঘর্ষ, বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকায়, কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রাখা যথেষ্ট নয়। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।”
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “বিলবোর্ড, প্রতীক ও প্রতীকী টাঙানোর মতো বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছ সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ সমাধান অত্যন্ত প্রয়োজন।”
সমাধান ও পরামর্শ
- স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশি উপস্থিতি বাড়ানো
- রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ স্থাপন করা
- সাধারণ মানুষকে সংঘর্ষ থেকে দূরে রাখা
- স্থানীয় নেতাদের মধ্যস্থতা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়াস
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ও দর্শনা এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের সংঘর্ষ রাজনৈতিক প্রতীক ও বিলবোর্ড টাঙানোকে কেন্দ্র করে নতুন মাত্রা পেয়েছে। আহতরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বশীলতা এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা ছাড়া এই ধরনের সংঘর্ষ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
এই ঘটনা শুধু চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং এটি জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
MAH – 13881 I Signalbd.com



