রাজনীতি

ঢাকায় দোকানে ঢুকে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা

Advertisement

দেশের রাজধানী ঢাকায় দিনের পর দিন রাজনৈতিক সহিংসতা ও টার্গেটেড হামলার ঘটনা বাড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় পল্লবীতে সশস্ত্র হামলায় যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের একটি দোকানে ঢুকে দুর্বৃত্তরা তাকে কাছ থেকে একাধিক গুলি করে পালিয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনেও ঘটনার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিস্তারিত: কীভাবে ঘটল হামলা

পল্লবী থানা এলাকায় বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারির ভেতরে বসে ছিলেন গোলাম কিবরিয়া, যিনি পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট ও মুখে মুখোশ ছিল, যাতে তাদের চেহারা স্পষ্ট না হয়।

সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কিবরিয়া দোকানে ঢোকার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি শুরু করে। দোকানে থাকা অন্য লোকজন হতচকিত হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। হামলাকারীদের একজন খুব কাছ থেকে তার মাথা, বুক ও পিঠে একাধিক গুলি করে। কিবরিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আরেকজন এসে আরও কয়েকটি গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

পুলিশ পরে এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৭টি গুলির খোসা উদ্ধার করে।

কিবরিয়া কে ছিলেন এবং তার রাজনৈতিক ভূমিকা কী

গোলাম কিবরিয়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিকভাবে পরিচিত একজন ব্যক্তি ছিলেন। যুবদলের সংগঠনিক কার্যক্রমে তার সক্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। স্থানীয়দের দাবি, তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসাও করতেন এবং তার কোনো বড় ধরনের শত্রুতা ছিল না বলে তারা জানতেন। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে।

পুলিশের একটি অংশ মনে করছে, তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকায় ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক শত্রুতা থাকতে পারে। তবে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এলাকায় আতঙ্ক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হতে থাকে, স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। যারা ঘটনার সময় দোকানের ভেতরে ছিলেন, তারা ভয়ে হতবিহ্বল।

রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই ঘটনা বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, এটি সুপরিকল্পিত টার্গেটেড কিলিং। যদিও পুলিশ ঘটনাটি তদন্তাধীন বলেই জানিয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা যায়।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সশস্ত্র তিনজনের এমন সাহসী হামলা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরছে। তিনি বলেন, “এতো জনমানুষের এলাকায় এভাবে এসে গুলি করে চলে যাওয়া খুবই ভয়ংকর বিষয়।”

রাজধানীতে টার্গেটেড হত্যার প্রবণতা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি টার্গেটেড হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সশস্ত্র ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে দ্রুত গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ করা গেছে। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই হামলাকারীদের পরিচয় জানা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ তারা হেলমেট ও মুখোশ ব্যবহার করে থাকে।

এ ধরনের হামলার তদন্তে সাধারণত সিসিটিভি ফুটেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পল্লবীতে ঘটে যাওয়া এই হামলাতেও সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ, যা বিশ্লেষণ করে হত্যাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ

অপরাধ বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিকল্পিত টার্গেটেড হামলা প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা প্রয়োজন। রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তিদের ওপর হামলা বেড়ে গেলে এর প্রভাব সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।

একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, ঢাকা শহরে অপরাধীরা প্রায়ই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে দ্রুত অপারেশন সম্পন্ন করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। এটি সাধারণ অপরাধ নয়—এই ধরনের কৌশল প্রশিক্ষিত দলেরই ব্যবহৃত পদ্ধতি। তাই তদন্তেও আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হবে।

তদন্ত কোথায় যাচ্ছে

হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ একজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে হত্যার উদ্দেশ্য কী ছিল, কারা এই পরিকল্পনা করেছে, এবং হামলাকারীরা কোথা থেকে এসেছে—তা এখনও পরিষ্কার নয়।

ঘটনার গুরুত্ব বিচার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত পরিচালনা করতে হবে। স্থানীয়রা মনে করছেন, হত্যার প্রকৃত পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা গেলে এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি কমবে।

রাজধানীতে অপরাধ দমন এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পল্লবীতে যুবদল নেতাকে সরাসরি দোকানে ঢুকে গুলি করে হত্যা করার এই ঘটনা সেই চ্যালেঞ্জকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

এম আর এম – ২২৭৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button