রাজনীতি

হাসিনার ফাঁসির আদেশ ট্রাইব্যুনালে রায়

Advertisement

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক নির্বাচিত সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুন্যাল-১-এর তিন সদস্যের বেঞ্চ বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুইটি মামলার রায় ঘোষণা করেন। প্রথম মামলায় শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং দ্বিতীয় মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালের নেতৃত্বে ছিলেন বিচারক মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, এবং অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী

রায় ৪৫৩ পৃষ্ঠার, যা ছয়টি ভাগে বিভক্ত। বিচারক রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। দুপুর ১২টা ৩৪ মিনিটে রায় পাঠ শুরু হয় এবং আড়াইটার মধ্যে শেষ হয়।

মামলার পটভূমি

এই মামলা সম্পর্কিত অভিযোগগুলি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত। অভিযোগে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় সরকারি বাহিনী এবং তার সহযোগীদের দায়বদ্ধতার কারণে সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞ, সাধারণ নাগরিক হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা, কারণ প্রথমবারের মতো কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীকে গণহত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

রায়ের বিস্তারিত

বিচারক রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়েন এবং জানান যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে তার সরাসরি বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ প্রমাণিত হয়েছে।

  • প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
  • দ্বিতীয় অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।

এই রায় দেশব্যাপী সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি চ্যানেল রায় সম্প্রচার করে। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে বড় পর্দায় বিচার কার্যক্রম দেখানো হয়, যাতে সাধারণ মানুষ সরাসরি রায় দেখতে পারে।

আসামি ও সাক্ষীরা

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, ফলে তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন

মামুন রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে জবানবন্দি দেন। তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন এবং রায়ের প্রমাণ হিসেবে আদালতে উল্লেখ করেছেন।

রায়ের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

রায়ের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে।

তবে রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

দেশের সাধারণ মানুষও এই রায়কে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় দেখেছে। কেউ এটিকে আইনের শাসনের জয় হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এই রায় ব্যাপকভাবে স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগে বাংলাদেশের অগ্রগতি নির্দেশ করে।

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়িত্বশীলদের বিচার করার ক্ষেত্রে অন্য দেশের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়

বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যা ও গণহত্যা সংক্রান্ত মামলার রায়ের ইতিহাস দীর্ঘ। তবে এই রায় প্রথমবারের মতো দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাকে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায় আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে দেশের জনমতকে শক্তিশালী প্রভাবিত করবে।

সংবাদ পরিবেশন ও সম্প্রচার

রায় ঘোষণার সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানুষ রায় দেখার জন্য ভিড় করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই রায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। সংবাদ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই রায় দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ঘটনা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় বাংলাদেশে আইন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সচেতনতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। একই সাথে, এটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড এবং অ্যাপ্রুভার হিসেবে গ্রেপ্তার আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের স্বীকারোক্তি, দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।

এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও বিচার ব্যবস্থার জন্যও এক নতুন উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে থাকবে।

MAH – 13845 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button