শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। রোববার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে শাখার সভাপতি রাহাত জামান ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা স্মারকলিপিতে চারটি প্রধান দাবির উল্লেখ করেছেন। দাবিগুলো হলো –
প্রথম দাবি: সহিংসতা বন্ধ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া
ছাত্রদল উল্লেখ করেছে, শাকসু নির্বাচন ঘোষণার পর কিছু শিক্ষার্থী ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে নিয়মবহির্ভূত ও অগণতান্ত্রিকভাবে সহিংস কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এর ফলে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নেতারা জানান, “এই ধরনের সহিংসতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বিপরীত। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত ও ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে যাদের দ্বারা সহিংসতা সংঘটিত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের জন্যই ক্ষতিকর।
দ্বিতীয় দাবি: সহিংসতায় জড়িতদের ছাড়া নির্বাচন
দ্বিতীয় দাবিতে বলা হয়েছে, সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা উচিত। শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ বা মব তৈরি করার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া যাবে না।
ছাত্রদল মনে করে, নির্বাচনের যে কোনো প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হওয়া উচিত। সহিংসতার প্রভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বৈধতা হুমকির মুখে পড়বে।
তৃতীয় দাবি: ছাত্ররাজনীতির পূর্ণ স্বীকৃতি ও নির্বাচন আয়োজন
নেতারা উল্লেখ করেছেন, গত ১০ মাস ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি স্থগিত থাকায় সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত ছিল। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আংশিকভাবে ছাত্ররাজনীতি পুনঃসক্রিয় করার অনুমতি দিয়েছিল।
ছাত্রদল দাবি করেছে, “সকল রাজনৈতিক সংগঠনকে সমানভাবে সহাবস্থান করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (শাকসু) নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।”
এতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
চতুর্থ দাবি: জাতীয় নির্বাচনের প্রভাব বিবেচনা
ছাত্রদল আরও জানায়, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে শাকসু নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা প্রয়োজন। নির্বাচনকে ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারবে না।
নেতারা বলেন, “শাকসু নির্বাচন যেন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করে এবং কোনো রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।”
ছাত্রদলের উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বৃহত্তম ও প্রখ্যাত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি। এখানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী অধিকার ও ন্যায্য সুযোগের জন্য আন্দোলন করে থাকে।
শাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাসে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করলে একাধিক ক্লাস ও কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
ছাত্রদল এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে এবং আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতা বিরাজমান থাকায় প্রশাসনকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী জানান, “আমরা সব পক্ষের বক্তব্য শুনে পর্যালোচনা করব। ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখা আমাদের মূল লক্ষ্য। শাসনকাঠামো অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসন জানিয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী বা সংগঠনকে আইনগত ও নৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হবে না। তবে সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।
শাবির শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
শাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ মনে করেন, সহিংসতায় জড়িতদের শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়। আবার কিছু শিক্ষার্থী মনে করেন, আন্দোলন শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারে। কিন্তু সহিংসতা দিয়ে আমাদের দাবি পূরণ সম্ভব নয়।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ছাত্রদল ঘোষণা করেছে, প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে তারা দাবিগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ না হলে আন্দোলন আবারও তীব্র আকার নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, আগামী নির্বাচনে সকল পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে।
সংক্ষেপে মূল বিষয়গুলো
- শাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দাবি করেছে ছাত্রদল।
- সহিংসতা ও অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা জরুরি।
- সহিংসতায় জড়িতদের ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
- সব রাজনৈতিক সংগঠনের সমানভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত না করতে নির্বাচন আয়োজনের সময় নির্ধারণ করতে হবে।
MAH – 13833 I Signalbd.com



