বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সরাসরি জনগণের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারের দুর্বলতা ব্যবহার করে হুমকি-ধমকি দেখানো উচিত নয়। ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জনগণের সামনে সমস্ত দলকে তাদের অবস্থান প্রদর্শন করতে হবে।”
তিনি এই আহ্বান জানান বুধবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির আয়োজন করা আলোচনা সভায়, যেখানে তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। সভার আয়োজন হয়েছিল ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের ৫০ বছর পূর্তির উপলক্ষে।
রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও জনগণের অধিকার
তারেক রহমান বলেন, “প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব হল, শুধু নিজ দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের প্রতি নয়, অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় জনগোষ্ঠীরও প্রত্যাশা ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া।” তিনি অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল সরকারকে দুর্বল হিসেবে দেখিয়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে, যা গণতন্ত্রকামী জনগণের অধিকার হরণের পথ সুগম করছে।
তিনি আরও বলেন, “কিছু রাজনৈতিক দল নানা শর্ত আরোপ করে জাতীয় নির্বাচন কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে চাইছে। এর মাধ্যমে পলাতক স্বৈরাচারের পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধরনের বাধা গ্রহণযোগ্য নয়।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান
তারেক রহমান মনে করান, বর্তমানে সরকারকে নির্ধারিত সময়সূচিতে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, “সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—একটি রাজনৈতিক দলের ইচ্ছা পূরণ করবে, নাকি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাবে।”
তিনি আশ্বাস দেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। জুলাই সনদে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। তবে, তিনি সতর্ক করে বলেন, সরকারের দুর্বলতা ব্যবহার করে বিএনপির বিজয় রোধ করতে যারা কাজ করছে, তা ভবিষ্যতে তাদেরই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
জাতীয় ঐক্য ও ৭ নভেম্বরের স্মৃতি
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমাদের শত্রু ও মিত্র চিহ্নিত করার দিন ছিল। দেশের মানুষের অধিকার হরণের চেষ্টা যেন আর কেউ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য।” তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হলে জনগণের চেতনা ও ঐতিহাসিক বিপ্লবের স্মৃতি মনে ধারণ করতে হবে।
দেশের অর্থনীতি ও কৃষকদের পরিস্থিতি
তারেক রহমান আলোচনায় উল্লেখ করেন, এই সময়ে চাষিদের জন্য কথিত গণভোটের চেয়ে আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “দেশে আলুর যথেষ্ট উৎপাদন রয়েছে, কিন্তু সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। জনগণের হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কথিত ‘গণভোট’ করার চেয়ে কৃষকদের জন্য আলুর সংরক্ষণাগার তৈরি করা বেশি গ্রহণযোগ্য।”
কর্মজীবী নারীদের উদ্বেগ
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশে ২ কোটিরও বেশি নারী কর্মজীবী। কাজের সময় কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তাদের বাকি ঘণ্টার মজুরি কে দেবে, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। নারীদের কর্মসংস্থান ও চাকরি নিরাপত্তা বজায় রাখা এই মুহূর্তে গণভোটের চেয়ে বেশি জরুরি।
শিক্ষা ও সংস্কারের গুরুত্ব
তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান বিশ্বে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। কথিত গণভোট নিয়ে গবেষণার পরিবর্তে শিক্ষা সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেয়াই দেশের জন্য বেশি প্রাসঙ্গিক।”
উপস্থিত বক্তারা
আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যগণসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এছাড়া এলডিপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, লেবার পার্টি, এবি পার্টি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও বিশ্লেষকরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বর্তমান সরকারকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুমকি না দেখাতে এবং জনগণের সামনে তাদের অবস্থান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার, কৃষক ও কর্মজীবী নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষার সংস্কার ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
এম আর এম – ২২১৬,Signalbd.com



