রাজনীতি

গণভোটের খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন বেশি প্রয়োজন: তারেক রহমান

Advertisement

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা গণভোটে ব্যয় করার পরিবর্তে কৃষকদের সহায়তায় পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপনই এখন সময়ের দাবি। তিনি মনে করেন, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে জনগণের মৌলিক চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বক্তব্যে তারেক রহমানের মন্তব্য

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বুধবার এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে গণভোট আয়োজনের চেয়ে দেশের কৃষকদের জন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন অনেক বেশি জরুরি। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন দুর্বল, তখন এ ধরনের বিলাসী উদ্যোগ জনগণের ক্ষোভ বাড়াবে।”

তারেক রহমান আরও বলেন, “কৃষক আজ ন্যায্যমূল্য পায় না, সংরক্ষণের অভাবে তাদের পণ্য নষ্ট হয়। অথচ সরকার জনগণের কষ্টের টাকায় গণভোটের নামে অপচয় করতে চায়।”

অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হুঁশিয়ারি

তারেক রহমান সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর রাজনৈতিক লাভের প্রচেষ্টার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ নিজেদের দাবি আদায়ে ব্যস্ত। এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে, যা দেশের জন্য শুভ নয়।”
তারেক রহমান দাবি করেন, বিএনপির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে কিছু পক্ষ রাজনৈতিক জোটে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের মুখোমুখি হয়ে জনমতের ভিত্তিতে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।

কৃষকদের দুরবস্থা ও পেঁয়াজ সংরক্ষণাগারের প্রয়োজনীয়তা

তারেক রহমান বলেন, “আজ দেশে কৃষকরা উৎপাদন করেও লাভ পাচ্ছে না। আলু, পেঁয়াজ বা ধান—সংরক্ষণের অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হয়। গণভোটে যে অর্থ ব্যয় হবে, তা দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় আধুনিক সংরক্ষণাগার তৈরি করা সম্ভব। এতে কৃষক উপকৃত হবে, দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “যে রাষ্ট্রে কৃষকের ঘাম শুকানোর আগেই তার ফসল নষ্ট হয়, সেখানে গণভোট নয়—উৎপাদন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করাই সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”

নারীর কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে জামায়াত আমিরের প্রস্তাবের সমালোচনা

বক্তব্যে তারেক রহমান জামায়াত আমিরের নারীদের পাঁচ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
তিনি বলেন, “পোশাক শিল্পে নারীরা ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেখানে তাদের কাজের সময় ৫ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হলে বাকি সময়ের মজুরি কে দেবে? এতে নারীর কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে।”
তার মতে, গণভোটের চেয়ে নারীর কর্মসংস্থান রক্ষা এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তারেক রহমানের আহ্বান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।”
তিনি অভিযোগ করেন, “নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে যারা রাজপথে ছিল, তারা এখন নির্বাচনের নামে নতুন জটিলতা সৃষ্টি করছে। পতিতদের ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।”
তারেক রহমান দাবি করেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাজনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে পড়বে এবং দেশের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত: বাস্তব অর্থনীতি ও জনগণের প্রয়োজন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তারেক রহমানের বক্তব্য বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। দেশে পেঁয়াজ ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের সংরক্ষণের অভাবের কারণে প্রতি বছর কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, কৃষি অবকাঠামোয় বিনিয়োগ না বাড়ালে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। সেই প্রেক্ষাপটে গণভোটের চেয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন একটি বাস্তবসম্মত দাবি।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার?

বক্তব্যের শেষে তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখার নামে জনগণের টাকায় গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনা আসলে অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। সরকারের উচিত হবে জনগণের মৌলিক চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া।”
তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, “দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কৃষক, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের ওপর—রাজনৈতিক কৌশলের ওপর নয়।”

তারেক রহমানের বক্তব্য স্পষ্টভাবে অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সংঘাতকে সামনে এনেছে।
তিনি যেখানে জনগণের মৌলিক প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন, সেখানে গণভোট আয়োজনের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এখন সময় বলে দেবে—সরকার ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল কতটা জনগণের বাস্তব সমস্যার প্রতি মনোযোগ দেয়।

এম আর এম – ২২০৫,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button