জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বিএনপি সংস্কারের পথে বাধা দিচ্ছে, আর জামায়াত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে। তিনি বলেন, সময়মতো নির্বাচন হওয়া ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নই দেশের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।
রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন ইস্যুতে আবারও উত্তাপ বেড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব ভেস্তে দিতে চাইছে, আর জামায়াত নানা অজুহাতে নির্বাচনের সময় পেছাতে চাচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এনসিপি চায় যথাসময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হোক এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি হোক।
বিএনপি সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে
রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিএনপি ঐকমত্য কমিশনের শুরু থেকেই মৌলিক বিষয়গুলোয় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে বিরোধিতা করছে। এতে জনগণের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে— তারা আসলে সংস্কারের পক্ষে আছে কি না।”
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠন করা। কিন্তু বিএনপি সেখানে ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা করে আসছে। এ ধরনের আচরণ সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতের কৌশল: নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা
নাহিদ ইসলামের মতে, জামায়াতে ইসলামী এখন এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত, যা নির্বাচনের সময়সূচি বিলম্বিত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তিনি বলেন, “জামায়াতের নানা কর্মসূচি ও অবস্থান থেকে মনে হচ্ছে, তারা হয়তো নির্বাচনের পরিবেশ জটিল করতে চায়।”
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হলে সেটি পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। জনগণ চায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সময়মতো নির্বাচন; তাই কোনো পক্ষই যেন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ফাঁদে না ফেলে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
জুলাই সনদের বৈধতা ও অধ্যাপক ইউনূস ইস্যু
এনসিপি আহ্বায়ক স্পষ্টভাবে জানান, জুলাই সনদের আইনি বৈধতা দিতে হলে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকেই সেটি জারি করতে হবে। তিনি বলেন, “এই সনদ যদি তথাকথিত রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে জারি হয়, তাহলে এর কোনো রাজনৈতিক বা আইনি ভিত্তি থাকবে না।”
নাহিদের মতে, জুলাই সনদ কেবল একটি দলিল নয়, এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তিনি মনে করেন, যদি সনদ জারির ক্ষেত্রে ভুল প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তবে সেই ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
গণভোট ইস্যুতে দ্বন্দ্ব ও নাহিদের অবস্থান
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে গণভোটের সময় নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, সেটিকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “গণভোট নির্বাচনের আগেও হতে পারে, নির্বাচনের দিনও হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে অযথা দ্বন্দ্ব তৈরি করা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায়।”
তিনি আরও যোগ করেন, মূল বিষয় হওয়া উচিত সংস্কার বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি স্থাপন— গণভোটের সময় নয়। এনসিপি মনে করে, ঐকমত্যের জায়গাগুলো নির্ধারণ করে দ্রুত বাস্তবায়নেই সবার মনোযোগ দেওয়া উচিত।
আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান
এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “নির্বাচনের আগে অনৈক্য সৃষ্টি হবে— এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রশ্নে সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ করিয়ে নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাই সব দলকে সতর্ক থাকতে হবে।”
তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে অবস্থান জানান এবং বলেন, “এই গণহত্যা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, দলীয় অপরাধ হিসেবেই দেখা উচিত।”
এনসিপির নির্বাচনী প্রস্তুতি
এনসিপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা ৩০০ আসন নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ মাসের মধ্যেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।”
জোটবদ্ধ রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে যে দলগুলো থাকবে, তাদের সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্য গঠনের বিষয়ে এনসিপি ইতিবাচক। তবে যারা সংস্কারের বিরোধিতা করবে, তাদের সঙ্গে কোনো জোট সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গ
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “ভারত যদি সত্যিই বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তবে তাদের আওয়ামী লীগের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখা বন্ধ করতে হবে। ভারতের উচিত হবে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা।”
তিনি মনে করেন, পারস্পরিক সম্মান ও জনগণের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও স্থিতিশীল হবে।
সময়মতো নির্বাচনই জাতির প্রত্যাশা
নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা ছিল— বিএনপি ও জামায়াতের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক সংস্কার যেন আটকে না যায়। তিনি চান, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি স্থাপিত হোক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নাহিদের এই বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তবে সব দলের সহযোগিতায় যদি সময়মতো নির্বাচন হয়, তাহলে দেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী ভিত্তি পাবে।
এম আর এম – ২০৪৭,Signalbd.com



