ঢাকার একটি আদালতের আদেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যুবদল নেতা আব্দুল কাইয়ূম আহাদ হত্যা মামলায় তিনি ৪৪ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয় এবং পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
মামলার ও গ্রেফতারের বিস্তারিত
আবদুল কাইয়ূম আহাদ ছিলেন যুবদলের একজন সক্রিয় নেতা। যাত্রাবাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংঘটিত একটি সহিংস ঘটনায় তিনি নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছিল। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নাম ৪৪ নম্বর আসামি হিসেবে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। রাত ৮টার দিকে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহ তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এবিএম খায়রুল হকের পরিচিতি ও অতীত কর্মকাণ্ড
এবিএম খায়রুল হক বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা বিচারপতি হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায় ও সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত এসেছে, যেগুলো এখনো আলোচিত।
তিনি ছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ভিত্তি স্থাপনকারী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও তার রায় ছিল গুরুত্বপূর্ণ, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
মামলাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠন যুবদল অভিযোগ করেছে, এটি একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে সরকারের সমালোচকদের দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, আইনের চোখে সবাই সমান। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় — সে যত উচ্চপদে আসীন থাকুক না কেন। তারা এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রমাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে।
সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা কতটা গ্রহণযোগ্য?
আইনজীবীরা বলছেন, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলার প্রসেস অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এতে ন্যায়বিচারের সবধরনের মানদণ্ড মেনে চলতে হবে। যদি তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ সত্যিই শক্তিশালী হয়, তাহলে বিচার চলতেই পারে। তবে, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি কীভাবে রাজনৈতিক সহিংসতায় যুক্ত থাকতে পারেন।
ঢাকা বারের এক সিনিয়র আইনজীবী বলেন, “মামলাটি যদি নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয় এবং রাষ্ট্রপক্ষ যথাযথভাবে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।”
মামলার অগ্রগতি
বর্তমানে এবিএম খায়রুল হক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা জামিনের আবেদন করবেন এবং উচ্চ আদালতে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করবেন।
পরবর্তী শুনানির তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে সাধারণ ধারণা করা হচ্ছে, এই মামলা দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে, এবং তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে।
সারসংক্ষেপ
সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলার ঘটনা দেশের ইতিহাসে বিরল। এটি যেমন আইনের শাসনের প্রতি এক ধরনের বার্তা দেয়, তেমনি এই ঘটনা থেকে নানাবিধ রাজনৈতিক বার্তাও উঠে আসে। এখন দেখার বিষয়, আদালত কতটা স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এই মামলাটি পরিচালনা করে।
এম আর এম – ০৫১৪, Signalbd.com



