রাজনীতি

শাপলা কলির বিষয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করে জানাবো: খালেদ সাইফুল্লাহ

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতীক তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন প্রতীক ‘শাপলা কলি’। এই প্রতীক নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন এবং শিগগিরই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবেন।

শাপলা প্রতীক না, যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’

সম্প্রতি ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা-২০০৮’ সংশোধন করে নির্বাচন কমিশন ১১৯টি নির্বাচনী প্রতীকের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেছে। নতুন তালিকায় ১০২ নম্বরে যুক্ত করা হয়েছে ‘শাপলা কলি’। এনসিপি দীর্ঘদিন ধরে ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে আসছিল, তবে ইসি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ‘শাপলা কলি’ অন্তর্ভুক্ত করেছে।

দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘শাপলা’ প্রতীকই তাদের পছন্দের প্রতীক ছিল, যা তারা লিখিতভাবে কমিশনে জানায়। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে মিল থাকায় ‘শাপলা’ তালিকাভুক্ত করা সম্ভব নয়। পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে ‘শাপলা কলি’।

এনসিপির প্রশ্ন: আইন অনুযায়ী কীভাবে প্রতীক নির্ধারণ?

বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে খালেদ সাইফুল্লাহ লেখেন, “নির্বাচন কমিশনকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোন আইন বা বিধির কারণে তারা ‘শাপলা’ প্রতীকটি তালিকাভুক্ত করতে পারছেন না। সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তারা ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করেছেন। আইন সবার জন্য সমান হতে হবে, বেছে বেছে প্রয়োগ করলে তা আর আইন থাকে না, অন্যায়ের হাতিয়ার হয়ে যায়।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদি জাতীয় প্রতীক সংরক্ষণের যুক্তিতে ‘শাপলা’ অন্তর্ভুক্ত না করা হয়, তবে একই যুক্তি ‘ধানের শীষ’, ‘তারকা’ বা ‘পাটপাতা’র মতো প্রতীকগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত। “একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ম বানিয়ে বা বদলে কাজ করতে পারে না,” — মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান: বিধিমালার মধ্যে থেকেই সিদ্ধান্ত

ইসি সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৪-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন এই সংশোধন করেছে। তারা মনে করে, নির্বাচনী প্রতীক নির্ধারণ সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই হয়। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, “কোনো দল প্রতীক হিসেবে যা চাইবে, তা সবসময় দেওয়া সম্ভব নয়। জাতীয় প্রতীক বা রাষ্ট্রীয় প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি কমিশনের এক্তিয়ারের মধ্যে নেই।”

এই অবস্থান স্পষ্ট করতে ইসি এর আগে এনসিপিকে চিঠি দিয়ে জানায়, প্রতীক নির্বাচনের সময় বিদ্যমান তালিকা থেকে একটি প্রতীক বেছে নিতে হবে। শাপলা প্রতীক না থাকায় তাদের বিকল্প প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এনসিপি বারবার ‘শাপলা’ প্রতীকেই অনড় ছিল।

শাপলা প্রতীক ঘিরে টানাপোড়েনের ইতিহাস

গত কয়েক মাস ধরেই এই প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও এনসিপির মধ্যে দফায় দফায় যোগাযোগ চলে আসছে। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর এনসিপি আবারও সাতটি নমুনাচিত্রসহ প্রতীকের প্রস্তাব পাঠায়, যেখানে প্রথম পছন্দ হিসেবে ছিল ‘শাপলা’। তবে ইসি সেই প্রস্তাব গ্রহণ না করে জানায়, বিধিমালার নির্ধারিত তালিকার মধ্য থেকেই প্রতীক বেছে নিতে হবে।

প্রতীক পছন্দের শেষ তারিখ ছিল ১৯ অক্টোবর। সেই সময়ও এনসিপি ‘শাপলা’ ছাড়া অন্য কোনো প্রতীক নেবে না বলে জানায়। অবশেষে কমিশন ৩০ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে ‘শাপলা কলি’ প্রতীকটি যুক্ত করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কী বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতীকের গুরুত্বের আরেকটি দৃষ্টান্ত। প্রতীক শুধু ভোটের চিহ্ন নয়, এটি দলের পরিচয়, ঐতিহ্য ও ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িত। অনেক সময় প্রতীক নিয়েই দলীয় অবস্থান বা জনপ্রিয়তা নির্ধারিত হয়।

বিশ্লেষক আহমেদ নাসিম বলেন, “শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল, তাই ‘শাপলা’ প্রতীকটি স্বাভাবিকভাবেই বেশি আবেগের সঙ্গে জড়িত। নির্বাচন কমিশনের আইনি অবস্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দলগুলোর প্রতীক নির্বাচনের স্বাধীনতাও সম্মান করা জরুরি।”

খালেদ সাইফুল্লাহর মন্তব্য: আমরা চিন্তা ভাবনা করে জানাবো

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘শাপলা কলি’ প্রতীকটি নিয়ে দলীয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, “আমরা জনগণের প্রতীক চাই। শাপলা আমাদের প্রত্যাশা, তবে কমিশন যে বিকল্প দিয়েছে, সেটি নিয়ে আমরা চিন্তা ভাবনা করে জানাবো।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের প্রতীক নির্ধারণ হবে দলের সদস্যদের ইচ্ছায় এবং আইনের সীমার মধ্যে। নির্বাচন কমিশনের কোনো এক অফিসারের ইচ্ছায় তা নির্ধারিত হতে পারে না।”

সামনে কী ঘটতে পারে

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এনসিপি যদি নতুন প্রতীক গ্রহণ না করে, তবে তাদের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। আবার দলটি যদি ‘শাপলা কলি’ গ্রহণ করে, তবে প্রতীকের নতুনত্ব নিয়ে প্রচারণায় বাড়তি সময় ব্যয় করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রতীক নিয়ে যেকোনো আপত্তি বা প্রস্তাব আমরা লিখিতভাবে গ্রহণ করি। প্রয়োজনে দলটি পুনরায় আবেদন জানাতে পারে, তবে বর্তমান তালিকা কার্যকর থাকবে।”

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে যুক্ত হয়েছে নতুন প্রতীক ‘শাপলা কলি’। এনসিপি এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে এবং এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। খালেদ সাইফুল্লাহ জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছেন। এখন দেখার বিষয়, দলটি শেষ পর্যন্ত ‘শাপলা কলি’ গ্রহণ করে কি না, নাকি নতুন করে কমিশনের কাছে দাবি তুলবে।

এম আর এম – ২০১২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button