রাজনীতি

জামায়াতের নতুন আমিরের নাম জানা যাবে নভেম্বরেই

Advertisement

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নতুন আমিরের নাম ঘোষণা করবে। দলটির বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ ডিসেম্বর মাসে শেষ হচ্ছে। নতুন আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

আমির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম জানান, সব জেলা ইউনিটে চলা রুকন সম্মেলনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই নতুন আমিরের নাম চূড়ান্ত করা হবে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত

জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটির নীতিমালা অনুসারে, নতুন আমির নির্বাচন একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া। জেলা ও মহানগরের রুকন সম্মেলনগুলোতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই ফলাফল একত্রিত করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এটিএম মাসুম বলেন, “প্রতিটি জেলায় রুকন সম্মেলনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলতি মাসেই শেষ হবে। গণনাকৃত ফল একত্রিত করে প্রকাশ করা হবে। নতুন আমিরের নাম নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে।”

দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, নতুন আমির নির্বাচন করার আগে তিন থেকে পাঁচ মাস ধরে অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। শূরা সদস্যদের মধ্যে গোপন ভোটের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া তিনজনকে একটি প্যানেলে রাখা হয়। রুকনরা এই তিনজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে ভোট দিয়ে নতুন আমির নির্বাচন করেন।

বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী’র রুকনের সংখ্যা প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার। প্রতিটি তিন মাস অন্তর জেলা ও মহানগরের রিপোর্ট সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় কমিটি এই সংখ্যা নিশ্চিত করে।

সম্ভাব্য আমির প্যানেল

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন আমির নির্বাচনের দুটি সম্ভাব্য প্যানেল ইতোমধ্যেই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। প্রথম প্যানেলে বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলাম আছেন। দ্বিতীয় প্যানেলে এটিএম আজহারুল ইসলামের পরিবর্তে নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের নাম রয়েছে।

বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান এই মুহূর্তে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচনের সম্ভাব্য প্যানেলে তার নাম থাকা এটিকে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রার্থীদের নতুন প্রজন্ম ও নির্বাচনী অভিজ্ঞতা

জামায়াত এবার প্রার্থী তালিকায় নতুন প্রজন্মের নেতাদের সামনে আনছে। কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, এবারের প্রার্থীদের প্রায় ৮০% আগে কখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। মাত্র ৫৯ জন প্রার্থীর পূর্ব নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা প্রাথমিক তালিকা দিয়েছি। প্রায় সব প্রার্থী তরুণ এবং শিক্ষিত। নির্বাচনের সময়ের মধ্যে তারা মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হবেন।”

জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচনের প্রক্রিয়া যথাযথ যাচাই-বাছাই, জেলা-উপজেলা নেতাদের মতামত এবং কেন্দ্রীয় বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্পন্ন হয়। প্রার্থীর শৃঙ্খলা বা কেলেঙ্কারি না থাকলে তালিকা থেকে কোনো পরিবর্তন করা হয় না।

আলোচিত নতুন প্রার্থী ও নির্বাচনী প্রস্তুতি

বিগত সময়ে ছাত্রশিবির বা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ হিসেবে আলোচিত নেতাদের মধ্যে অনেককে এবার প্রার্থী করা হচ্ছে। যেমন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ পটুয়াখালী-২ আসনে, সুনামগঞ্জ-২ আসনে শিশু মনির, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ঠাকুরগাঁও-১ আসনে দেলাওয়ার হোসেইন সাঈদী প্রার্থী হয়েছেন।

সাবেক আমিরদের সন্তানরাও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। পাবনা-১ আসনে নাজিবুর রহমান মোমিন, পিরোজপুর-১ ও পিরোজপুর-২ আসনে মাসুদ ও শামীম সাঈদী প্রার্থী হয়েছেন। ঢাকা-১৪ আসনে মীর আহমদ বিন আরমান নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

সমঝোতার জোট ও রাজনৈতিক প্রভাব

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থী দলগুলো একটি সমঝোতা জোট গঠন করার চেষ্টা করছে। জামায়াত এখানে নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে। জোটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং আরও ছয়টি ছোট দল রয়েছে।

পূর্বে ইসলামী দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে জোট গঠন করলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সফল হয়নি। তবে এবারে পারস্পরিক বোঝাপড়া শক্তিশালী হওয়ায় আশা করা হচ্ছে নির্বাচনে প্রভাব বাড়বে।

মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব এবং তরুণ প্রার্থীদের প্রার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্তি জামায়াতের জন্য ইতিবাচক সংকেত। দলটি গত কয়েক নির্বাচনে অভিজ্ঞ নেতাদের বড় অংশ হারিয়েছে, তাই নতুন প্রার্থীরা দলের পুনর্গঠন ও জনসমর্থন অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশ্লেষকরা আরও বলেন, “নতুন আমির নির্বাচনের ফলাফল দলের অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে সমন্বয়ের উপর নির্ভর করবে।”

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জামায়াতের নতুন আমিরের নাম ঘোষণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে নজর কাড়বে। তরুণ নেতৃত্বের আগমন এবং সমঝোতা জোট গঠনের প্রক্রিয়া দলের কার্যক্রমকে আরও সক্রিয় করতে পারে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনের ফলাফল ও জনসমর্থন কেমন হবে তা আগামী কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে।

এম আর এম – ১৯৫২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button