বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী মাসে পবিত্র ওমরা হজ পালন করতে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত এই নেতার ওমরার সফরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে নতুন আলোচনার ঢেউ।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) যমুনা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,
“তারেক রহমান আগামী মাসের ২০ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে সপরিবারে সৌদি আরব রওনা দেবেন। পবিত্র ওমরা পালন শেষে তিনি আবার লন্ডনে ফিরে যাবেন।”
পবিত্র ওমরা—ইসলামের এক মহিমান্বিত ইবাদত
ইসলামে হজের মতোই ওমরার রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। ওমরা পালন করা মুসলমানদের জন্য এক গভীর আত্মিক অভিজ্ঞতা। সারা বছর জুড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা মক্কা শরিফে এসে এই পবিত্র ইবাদতে অংশগ্রহণ করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তারেক রহমানের এই সফর শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব পালন নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তও হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক চাপ, মামলার জটিলতা ও বিদেশে নির্বাসিত জীবনের পর এমন একটি আধ্যাত্মিক সফর তাঁর ও পরিবারের মানসিক প্রশান্তিতে ভূমিকা রাখবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সৌদি সফর শেষে দেশে ফেরার সম্ভাবনা
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী বলেন,
“ওমরা শেষে তিনি নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে কিংবা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ঢাকায় ফিরবেন বলে পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনো নির্দিষ্ট দিন চূড়ান্ত হয়নি।”
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের দেশে ফেরা উপলক্ষে দলীয় পর্যায়ে একাধিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মসূচি—সব কিছুই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে দলটি।
দেশে ফেরাকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার
বিএনপি’র পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে। কমিটির এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন,
“আমরা ধরে নিচ্ছি ২৩ নভেম্বরের দিকেই তিনি ফিরতে পারেন। সে অনুযায়ী রাজধানীর নিরাপত্তা ও যাতায়াত ব্যবস্থা নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
উক্ত সূত্র আরও জানায়, জাপান থেকে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি আসার কথা রয়েছে। সেটি নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পৌঁছালে তা তারেক রহমানের যাতায়াতে ব্যবহার করা হবে।
গুলশানে পুরনো বাড়িতেই থাকবেন
তারেক রহমান দেশে ফেরার পর ঢাকার গুলশান-২ নম্বর সড়কের ১৯৬ নম্বর বাড়িতেই অবস্থান করবেন বলে জানা গেছে। এটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুরনো সরকারি বরাদ্দকৃত বাসভবন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ১৯৮১ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এই বাড়িটি তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সেটিই বিএনপি নেতৃত্বের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
দলীয় নেতাকর্মীরা আশা করছেন, দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা হলে গুলশান-২-এর এই বাড়িটি আবারও বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।
দীর্ঘদিনের নির্বাসিত জীবন
২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর পর থেকেই তারেক রহমান সেখানেই বসবাস করছেন। গত দেড় দশকে তিনি সরাসরি রাজনীতিতে না থাকলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলে তাঁর প্রভাব ও নেতৃত্ব বজায় রয়েছে।
বিভিন্ন সময় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, এবং জাতীয় নির্বাচন বা আন্দোলনের সময়ে ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর দেশে ফেরা BNP রাজনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে পারে। কারণ, ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি বর্তমানে নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
দেশে ফেরার রাজনৈতিক তাৎপর্য
তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু ব্যক্তিগত ঘটনা নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় একটি মোড় ঘোরানোর ইঙ্গিতও বহন করছে।
দলীয় নেতারা মনে করছেন,
“ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপস্থিতি বিএনপির মনোবলকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলবে। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা নতুন উদ্যমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, সরকারের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক সম্পর্ক যেভাবে জটিল হয়ে উঠেছে, সেখানে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
কেউ কেউ মনে করছেন, দেশে ফিরে তিনি দলের পুনর্গঠন, তৃণমূলের সংস্কার এবং আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
পারিবারিক দিক: খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ ও পারিবারিক পুনর্মিলন
তারেক রহমানের দেশে ফেরা মানে শুধু রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন নয়, এটি এক গভীর পারিবারিক অনুভূতিরও প্রতিফলন। তাঁর মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ অবস্থায় আছেন।
দলীয় সূত্র মতে, তাঁর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হয়েছে সম্প্রতি। এমন পরিস্থিতিতে ছেলের উপস্থিতি পরিবারের জন্য মানসিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে অনেকেই মনে করছেন।
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, ওমরা পালন শেষে দেশে ফেরা তাঁর জন্য একধরনের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও পারিবারিক দায়িত্বের বাস্তবায়ন হবে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
তারেক রহমানের এই সফর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলোর একাংশ ইতিমধ্যেই তাঁর সৌদি সফর ও সম্ভাব্য দেশে ফেরাকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করছে।
এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন,
“তারেক রহমানের ওমরা সফর ও পরবর্তী দেশে ফেরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, যদি তিনি দেশে ফিরে সরাসরি নেতৃত্বে আসেন।”
ওমরা পালন ও সফরের সময়সূচি (সম্ভাব্য)
| ধাপ | সময় | মন্তব্য |
|---|---|---|
| সৌদি আরব যাত্রা | ২০–২১ নভেম্বর ২০২৫ | সপরিবারে |
| ওমরা পালন | ২২–২৪ নভেম্বর ২০২৫ | মক্কা ও মদিনায় |
| লন্ডনে প্রত্যাবর্তন | ২৬ নভেম্বর ২০২৫ | অস্থায়ীভাবে |
| বাংলাদেশে ফেরা | নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ডিসেম্বরের শুরু | দিন এখনো চূড়ান্ত নয় |
বিএনপিতে প্রাণচাঞ্চল্য
বিএনপি নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যেই তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। অনেকে বলছেন, “এটি হবে বিএনপির রাজনীতির নতুন অধ্যায়।”
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যানার-পোস্টার লাগানোর প্রস্তুতি চলছে। দলীয়ভাবে একটি সংবর্ধনা কমিটিও গঠন করা হয়েছে, যারা তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে গণসংবর্ধনার পরিকল্পনা করছে।
পবিত্র ওমরা পালন মুসলমানদের জীবনে আত্মিক শুদ্ধির প্রতীক। তারেক রহমানের এই সফর তাই শুধু ধর্মীয় নয়, বরং রাজনৈতিক ও পারিবারিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি যে একজন বিতর্কিত হলেও প্রভাবশালী নেতা—এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই, তাঁর দেশে ফেরা বিএনপি এবং জাতীয় রাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
MAH – 13480 I Signalbd.com



