বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রের সুরক্ষায় প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও সৃজনশীল শিক্ষা কাঠামো গড়ে তুলবে।
শিক্ষাকে রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হিসেবে দেখছেন তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “রাষ্ট্রের সুরক্ষায় প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা। প্রতিটি মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা আছে, সেটি বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।” তিনি ঘোষণা দেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় খন্দকার শামসুল আলম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি ছিল রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাবনার অংশ হিসেবে স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ।
শিক্ষায় সর্বোচ্চ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি
তারেক রহমান বলেন, “বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে শিক্ষাখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। দেশের প্রতিটি শিশুকে মানসম্মত ও আধুনিক শিক্ষা দিতে বাজেটে সর্বাধিক বরাদ্দ থাকবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি অপরিহার্য। এজন্য শিক্ষাকে কেবল বইয়ের সীমাবদ্ধতায় নয়, বরং গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিস্তৃত করতে হবে।
আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকভাবে সাজাতে আমরা ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করেছি। তারা সময়োপযোগী শিক্ষা কাঠামো প্রণয়নে কাজ করছে।”
তিনি জানান, বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবে শিক্ষাখাতকে অন্যতম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কারিকুলাম পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ আছে।
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, শিক্ষা হলো রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি, আর সেই ভিত্তি শক্ত না হলে অর্থনীতি, প্রশাসন কিংবা সমাজ—কোনোটিই টেকসই হবে না।
প্রতিটি শিশুর প্রতিভা বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে
তারেক রহমান বলেন, “প্রতিটি মানুষের মধ্যে একেকটি অনন্য প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো সেই প্রতিভাকে খুঁজে বের করে বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া।”
তিনি মনে করেন, বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি পরীক্ষাভিত্তিক এবং মুখস্থনির্ভর হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে পিছিয়ে পড়ছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সৃজনশীল শিক্ষা, নৈতিক মূল্যবোধ, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার ওপর জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনমুখী শিক্ষা দিতে চায়।
শিক্ষা সংস্কারে বিশেষজ্ঞ টিমের কাজ চলছে
বিএনপির ঘোষিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ প্রস্তাবের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যেই একটি বিশেষজ্ঞ টিম শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের রূপরেখা তৈরি করছে বলে জানান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “এই টিম শিক্ষা গবেষক, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। তারা জাতীয় শিক্ষানীতিকে সময়োপযোগী করতে কাজ করছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ এমন এক শিক্ষা কাঠামো তৈরি করুক যেখানে প্রতিটি শিশুর সৃজনশীলতা বিকাশ লাভ করবে।”
শিক্ষা খাতে অতীতের সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা বাজেট মোট বাজেটের প্রায় ১২ শতাংশের নিচে থাকলেও, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তারেক রহমান মনে করেন, শিক্ষায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না থাকলে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক, আধুনিক ল্যাবরেটরি, এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো থাকুক। শিক্ষা শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেও সমানভাবে পৌঁছাতে হবে।”
তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান
তারেক রহমান তরুণ প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ তোমাদের হাতে। শিক্ষা তোমাদের অস্ত্র, সেটিকে কাজে লাগাও। তোমরা যদি জ্ঞান, প্রযুক্তি ও সততার পথে এগিয়ে যাও, বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে পৌঁছাবে।”
তিনি তরুণদেরকে দেশপ্রেম, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের প্রস্তুত করার আহ্বান জানান।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির অঙ্গীকার কতটা বাস্তবসম্মত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নতুন নয়, তবে বাস্তবায়নই হবে চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ঘোষিত ৩১ দফা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়, তাহলে বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আসবে।
তারা বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সমন্বয় ঘটাতে পারলেই এই রূপান্তর সম্ভব হবে।
তারেক রহমানের এই ঘোষণা বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গীকারের পাশাপাশি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষায় বিনিয়োগকে জাতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
তবে বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
এম আর এম – ১৯২৮,Signalbd.com



