বিনোদন

শাপলার রঙে রঙিন: পর্যটকে মুখরিত ত্রিশালের চেচুয়া–গলহর বিল

Advertisement

চেচুয়া–গলহর বিল: ময়মনসিংহের লুকানো স্বর্গ

ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত চেচুয়া ও গলহর বিল প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের ভান্ডার। বর্ষা এলেই এ বিলে চোখ যতদূর যায়, লাল শাপলার বিস্তৃত সমুদ্রের মতো দৃশ্য তৈরি হয়। এর সঙ্গে সাদা ও বেগুনি শাপলার রঙ মিলে প্রকৃতিকে করে তোলে আরও মনোমুগ্ধকর।

বর্ষার মৌসুমে বিলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলার সমারোহ চোখে পড়ার মতো হয়ে ওঠে। শীতের শুরু পর্যন্ত এখানে থাকে শাপলার বিস্তার। এ কারণে এখন বিলটি দেশের অন্যতম আলোচিত প্রকৃতি-ভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

শাপলার রাজ্যে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে পর্যটকরা

বর্তমানে প্রতিদিন হাজারো ভ্রমণপিপাসু এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন। কেউ পানিতে নেমে শাপলা ছিঁড়ে হাতে নিচ্ছেন, কেউবা নৌকায় করে ফুলের রাজ্যে ঘুরছেন। আবার অনেকে ছবি তুলতে ব্যস্ত, যাতে স্মৃতিটা ধরে রাখা যায়।

কেউ কেউ এখানে আসছেন পরিবার নিয়ে, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে। পর্যটকের ঢল বাড়ার কারণে এলাকাবাসীও এখন নৌকা ভাড়া দিয়ে আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে অতিরিক্ত ফুল ছেঁড়া এবং অসচেতনতার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে হুমকি দেখা দিচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।

দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা ও ভোগান্তি

এই বিলে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের অনেকে জানিয়েছেন, শাপলার সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। তবে কাদামাটির কারণে অনেক সময় হাঁটাচলায় ভোগান্তি হয়। যারা কাছ থেকে শাপলা দেখতে চান, তাদের নেমে পড়তে হয় পানিতে। জামাকাপড় ভিজে গেলেও প্রকৃতির ডাকে কেউ পিছু হটেন না।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিজ মাহমুদ সাদিক বলেন,
“ফুলের সৌন্দর্য আমার কাছে সব সময়ই ভালো লাগে। এত কাছ থেকে শাপলার বিশাল সমারোহ দেখে আমি অভিভূত। শত শত মানুষকে একসঙ্গে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।”

চেচুয়া বিলে গুজবের ইতিহাস: রোগ নিরাময়ের মিথ্যা প্রচারণা

চেচুয়া বিলে পর্যটকদের ভিড় আজকের বিষয় নয়। কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক গুজবের সূত্র ধরে সারা দেশে আলোচনায় আসে এই বিল। তখন প্রচার হয়েছিল—এই বিলে নাকি রয়েছে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। ফলে হাজারো মানুষ বিলের পানিতে নেমে গোসল করতে শুরু করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। মাইকিং, প্রচারণা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত মাঠে নামানো হয়। পরে সত্য প্রকাশ পেলে গুজবের অবসান ঘটে। এখন এ বিল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণেই মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

চেচুয়া–গলহর বিল: সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

স্থানীয়দের মতে, চেচুয়া–গলহর বিল ধীরে ধীরে একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। যদিও সরকারি উদ্যোগে এখানে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ নেই, কারণ জমি সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন। তবুও স্থানীয়দের উদ্যোগ এবং সচেতনতার মাধ্যমে এ স্থানটি দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক আকর্ষণে পরিণত হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মো. আনিছুর রহমান বলেন,
“আমরা চাই এই এলাকা একটি স্থায়ী পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হোক। এ জন্য প্রয়োজন ফুল সংরক্ষণ, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন,
“চেচুয়া বিল এখন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় সরকারি পর্যায়ে স্থায়ী পর্যটনকেন্দ্র করা সম্ভব নয়। তবু ফুল সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় আছে।”

কীভাবে যাবেন চেচুয়া–গলহর বিলে?

ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোনো বাসে ত্রিশাল নামতে হবে। সেখান থেকে অটোভ্যানে বালিপাড়া রোডের ঠাকুরবাড়ি মোড় (ভাড়া ১০ টাকা) পর্যন্ত যেতে পারবেন। এরপর হেঁটে বা স্থানীয় ভ্যানে সহজেই পৌঁছানো যায় চেচুয়া বিলে।

ভ্রমণ পরামর্শ

✔ বর্ষাকাল (জুলাই–সেপ্টেম্বর) হলো শাপলার মৌসুম।
✔ ভিড় এড়াতে সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনগুলোতে ভ্রমণ ভালো।
✔ কাদা ও পানিতে হাঁটার জন্য হালকা পোশাক এবং স্যান্ডেল সঙ্গে রাখুন।
✔ ফুল ছেঁড়া থেকে বিরত থাকুন, যাতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন থাকে।

চেচুয়া–গলহর বিলের আকর্ষণ

  • লাল, সাদা ও বেগুনি শাপলার বিস্তৃত সৌন্দর্য
  • নৌকায় করে বিল ভ্রমণের সুযোগ
  • গ্রামীণ প্রকৃতির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ
  • ফটোগ্রাফির জন্য স্বপ্নের লোকেশন

চেচুয়া–গলহর বিলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তবে এ এলাকা দেশের অন্যতম শাপলা পর্যটন স্পট হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রচার পেতে পারে। তবে এজন্য প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য বিশ্রামকেন্দ্র এবং পরিবেশ সংরক্ষণ।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসন ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ হলে এটি হবে নতুন একটি ইকো-ট্যুরিজম স্পট।

MAH – 12638,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button