দেশে নির্বাচনী সংস্কার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) জামায়াতে ইসলামি ও তাদের সমমনা সাতটি রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে দেশের সব বিভাগীয় শহর ও মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সরকারের দমন-পীড়ন ও দুর্নীতি দূরীকরণ।
অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহ
আজকের বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ৮টি দল হলো:
- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
- খেলাফত মজলিস
- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
- বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
- জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)
- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)
এই দলগুলো জানিয়েছে, যদি তাদের দাবি পূরণ না করা হয়, তবে আগামী মাস থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আন্দোলনের পটভূমি
জোটের শীর্ষ নেতারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে গত রোববার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তারা জানিয়েছেন, জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী ও ছাত্রসংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বিক্ষোভ সফল করতে জনগণকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নেতারা বলেন, “এই আন্দোলন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি নির্বাচনী সংস্কার এবং জনগণের মতামতকে প্রতিফলিত করার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রয়াস। আমরা চাই জনগণ যেন সরকারি সিদ্ধান্তে সরাসরি অংশ নিতে পারে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এই আন্দোলন সম্পূর্ণ হবে না।”
জামায়াতসহ ৮ দলের পাঁচ দফা দাবি
জোটের দাবিগুলো হলো:
- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং তার ওপর আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোট আয়োজন করা।
- আগামী জাতীয় নির্বাচনে উচ্চকক্ষ বা উভয় কক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR) পদ্ধতি চালু করা।
- অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সমান সুযোগ (Level Playing Field) তৈরি করা।
- বর্তমান সরকারের দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দৃশ্যমান করা।
- জাতীয় পার্টি ও ১৪-দলীয় জোটের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে, জোট আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুমকি দিয়েছে।
রাজধানীতে পূর্ববর্তী বিক্ষোভ
এর আগে ২০ অক্টোবর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতারা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণা চালিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আজকের (২৫ অক্টোবর) বিক্ষোভ সমাবেশ দেশের সব বিভাগীয় শহরে একইভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এবং ২৭ অক্টোবর জেলা শহরগুলোতেও মিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করা হবে।
জোটের নেতা রওশন আলী (ধরা যাক) বলেন, “আমরা চাই জনগণ যেন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে। আমাদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থে নয়, এটি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য।”
সরকারের দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক অবস্থা
জোটের অভিযোগ, বর্তমান সরকার দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপে রাখছে। সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা নিয়ে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলো নির্বাচনী সংস্কার ও গণভোটের দাবিতে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশের আয়োজন
- ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলো: আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত মিছিল ও সমাবেশ।
- জেলা শহরগুলো: ২৭ অক্টোবর একই ধরনের বিক্ষোভ।
- প্রধান দাবিগুলো: গণভোট, নির্বাচনী সংস্কার, সরকারের দুর্নীতি ও দমন-পীড়নের বিচার, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ।
নেতারা জানিয়েছেন, এই আন্দোলন ধাপে ধাপে আরও সম্প্রসারিত হবে, এবং দেশের সব নাগরিককে সচেতন ও সক্রিয় অংশগ্রহণে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিশেষ বিশ্লেষণ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতসহ এই আট দল বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে:
- নির্বাচনী সংস্কারের দীর্ঘদিনের দাবী।
- জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
- সরকারের দুর্নীতি ও দমন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের আন্দোলন যদি সুসংগঠিত ও শান্তিপূর্ণ থাকে, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে বিক্ষোভে হিংসা বা বিশৃঙ্খলা না হয়।
নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া
রাজধানীর সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, “আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হোক। আমাদের ভোটাধিকার ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করা খুব জরুরি।”
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “যে কোনো আন্দোলনই যদি জনগণের অংশগ্রহণে হয়, তা দেশের জন্য ফলপ্রসূ হয়। আমরা চাই সরকারের দুর্নীতি ও নির্বাচনী অনিয়ম দূর হোক।”
আজকের বিক্ষোভ একটি জাতীয় আন্দোলনের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। জামায়াতসহ ৮টি দল জনগণের ভোটাধিকার ও নির্বাচনী সংস্কার নিশ্চিত করতে মাঠে এসেছে। এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও সুসংগঠিতভাবে সম্পন্ন হলে, তা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
MAH – 13461 I Signalbd.com



