রাজনীতি

বগুড়ায় গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা, যা বললেন সারজিস

Advertisement

বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের উপস্থিতিতে দলের সমন্বয় সভাস্থলে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ হামলা হয়। ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ককটেল বিস্ফোরণে উত্তেজনা, উপস্থিত ছিলেন সারজিস আলম

পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপির জেলা পর্যায়ের সমন্বয় সভা চলাকালে মিলনায়তনের বাইরে পরপর দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে একটি বিস্ফোরিত হয়, অপরটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। সভায় উপস্থিত ছিলেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, এই হামলা ছিল পরিকল্পিত। তারা দাবি করেন, সভা শুরুর ঠিক আগে পরপর তিনটি ককটেল ছোড়া হয়—যার দুটি বিস্ফোরিত হয় এবং একটি পাওয়া যায় অবিস্ফোরিত অবস্থায়। বিকট শব্দে মিলনায়তন এলাকা কেঁপে ওঠে, মুহূর্তেই ধোঁয়ায় ঢেকে যায় আশপাশ। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সারজিস আলমের অভিযোগ: “একটি মহল নির্বাচন ঘিরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে”

সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সারজিস আলম। তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়। আজকের ককটেল হামলাও সেই চক্রান্তের অংশ।”

তিনি আরও বলেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাশকতা, অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটছে। এই হামলাগুলোর মাধ্যমে জনগণের মনে ভয় সৃষ্টি করে নির্বাচনী পরিবেশকে নষ্ট করা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্ব হলো এমন পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা, কিন্তু তারা ব্যর্থ হচ্ছে।”

সারজিস অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে। “এমন গুরুত্বপূর্ণ সভাস্থলে যদি হামলা হয়, তবে বুঝতে হবে নিরাপত্তায় বড় ফাঁক থেকে গেছে। এটা নিছক কাকতালীয় নয়,” বলেন তিনি।

পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছি। এটি পরিকল্পিত হামলা কি না, তা যাচাই করতে তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”

তিনি আরও জানান, আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল, তা শনাক্তে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন উত্তেজনা

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা মনে করছেন, এই হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, জাতীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে এমন হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে।

দলীয় নেতা শওকত ইমরান বলেন, “আমাদের সমন্বয় সভা ভণ্ডুল করতেই এই হামলা হয়েছে। দেশের জনগণ এখন পরিবর্তন চায়, আর সেটাই কিছু মহলের সহ্য হচ্ছে না।”

এদিকে এনসিপি নেতাকর্মীরা হামলার পরপরই জেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে সারজিস আলম সভা সংক্ষিপ্ত করে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে বগুড়া ত্যাগ করেন।

সারজিসের সতর্ক বার্তা: “কোনো দলের প্রশাসন হবেন না”

সারজিস আলম তার বক্তব্যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কোনো দলের প্রশাসন হয়ে উঠবেন না। জনগণের প্রশাসন হয়ে উঠুন। যদি নির্বাচনকে ঘিরে এমন নাশকতা অব্যাহত থাকে, তাহলে এর দায় নিতে হবে সরকারের পাশাপাশি নিরাপত্তা সংস্থাকেও।”

তিনি আরও যোগ করেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি গণতন্ত্রের পক্ষে, কিন্তু ফ্যাসিস্ট আচরণের বিরুদ্ধে। জনগণকে ভয় দেখিয়ে কেউ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র এখনই বন্ধ করতে হবে।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ককটেল বিস্ফোরণের সময় উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, “হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে সবাই ছুটে আসে। দেখি ধোঁয়ায় চারপাশ ঢেকে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম গ্যাস বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে পুলিশ এসে জানায়, ককটেল ছোড়া হয়েছিল।”

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নূরজাহান বেগম বলেন, “বাচ্চারা ভয় পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। পরে বুঝলাম রাজনৈতিক সভাকে কেন্দ্র করেই এমন ঘটনা ঘটেছে।”

নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে—এমন সতর্কতা আগেই ছিল। বগুড়ার ঘটনার মাধ্যমে সেই আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, “যখন নির্বাচনের আগে বিরোধী ও উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তি মাঠে সক্রিয় হয়, তখন অনেক সময় নাশকতা ও হামলার মাধ্যমে তাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়। এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য ভালো বার্তা নয়।”

তিনি মনে করেন, “নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও সক্রিয় ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নইলে নির্বাচনকালীন আস্থার সংকট আরও গভীর হবে।”

তদন্তের ফলাফলের অপেক্ষায় বগুড়াবাসী

বগুড়ার এই হামলার ঘটনায় এখনো কেউ আটক হয়নি। পুলিশ বলছে, দোষীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে শহরে এখনও কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সারজিস আলম বলেছেন, “এটি আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি।”

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ঘটনা যদি ঘন ঘন ঘটে, তাহলে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত শেষে কারা দায়ী প্রমাণিত হয় এবং প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়।

এম আর এম – ১৮৫৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button