
পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়েদ হোসাইন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের নজরদারি, দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিবরণ
রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার আরমানিটোলার পানির পাম্প গলিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে দু’জনকে শনাক্ত করেছে।
ডিএমপি লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী সাংবাদিকদের জানান, “প্রাথমিকভাবে আমরা দু’জনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জুবায়েদকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ সকল সাক্ষী ও বিল্ডিংয়ের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জুবায়েদ হোসাইন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জুবায়েদ তার টিউশনির কাজে পুরান ঢাকার ওই বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে তার উপর হামলা চালানো হয় এবং সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়।
পুলিশি তদন্ত ও পদক্ষেপ
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম নিহতের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ঘটনাস্থলসহ সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, শনাক্ত করা দু’জন সন্দেহভাজনকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য সম্ভাব্য তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “জুবায়েদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দ্রুত দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশা করছি।” তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা আমাদের অগ্রাধিকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকও জানান, তিনি পুলিশকে সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করতে বলেছেন এবং ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “যারা পালিয়েছে, তারা হত্যাকারী। জুবায়েদ যেখানে টিউশন দিতে যেত, সেই পরিবারও কিছুটা দায়ী হতে পারে।” তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের আলটিমেটাম দিয়েছেন।
এছাড়া, ছাত্রদলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থী সংগঠনও ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে এবং দ্রুত বিচার দাবী করেছে।
বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা হত্যাকারীদের শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, ছাত্রনেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসাইনের হত্যাকাণ্ডে পুলিশ দুইজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছে। তদন্ত চলমান এবং গ্রেফতারের জন্য একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠন হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার দাবী করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনার ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক তৎপরতার উপর নতুন মনোযোগ প্রয়োজন। দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃস্থাপন করতে সহায়ক হবে।
এম আর এম – ১৮৫৫,Signalbd.com