
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় একটি এতিমখানায় রান্নাঘরের টিন কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) গভীর রাতে জালালাবাদ তালিমুল কোরআন হেফজ ও এতিমখানায় এই চুরির ঘটনা ঘটে। এতিমখানার রান্নাঘরে রাখা ফ্রিজ থেকে মাছ ও মাংস নিয়ে যায় চোরেরা।
মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। গভীর রাতে সুযোগ বুঝে রান্নাঘরের টিন কেটে ভিতরে প্রবেশ করে চোরেরা। এরপর তারা ফ্রিজে সংরক্ষিত প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাছ-মাংস নিয়ে যায়।
এতিমখানার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগ
এই ঘটনায় এতিমখানার ১১০ জন শিক্ষার্থী ও ৭ জন শিক্ষকসহ প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ ও মাংস থাকলেও হঠাৎ করে এসব খাবার হারিয়ে যাওয়ায় তাদের নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে।
এতিমখানার পরিচালক জানিয়েছেন, শিশুরা তিনবেলা নির্দিষ্ট খাবার পেয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে সংরক্ষিত খাবার চুরি হয়ে যাওয়ায় তাদের খাওয়াতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
আগে ঘটেছিল একই ধরনের চুরি
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক জানিয়েছেন, এর আগেও একবার একইভাবে টিন কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তখনও রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি হয়েছিল। ধারাবাহিকভাবে এমন ঘটনা ঘটায় এতিমখানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
তিনি বলেন, “এখানে এতিম ও অসহায় শিশুরা বসবাস করে। তাদের অন্ন নিয়ে কেউ চুরি করবে—এটা কল্পনাতীত। আমরা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার অনুরোধ করছি।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, সমাজে এমন পরিস্থিতি নৈতিকতার কতটা অবক্ষয় নির্দেশ করে। এতিম শিশুদের খাবার চুরিকে অনেকে ‘অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
অনেকে আবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, এতিমখানায় এ ধরনের চুরি প্রতিরোধে স্থানীয়ভাবে নজরদারি ও নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজন।
স্থানীয়দের উদ্বেগ ও সহানুভূতি
এলাকার সাধারণ মানুষ এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এতিম ও দরিদ্র শিশুদের জন্য সংরক্ষিত খাবার চুরি করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। পাশাপাশি অনেকেই এতিমখানার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
কিছু সমাজসেবী জানিয়েছেন, তারা এতিমখানার খাদ্য সংকট দূর করতে সাময়িক সহযোগিতা করবেন। তবে স্থায়ীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে।
পুলিশের ভূমিকা ও তদন্ত
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে তদন্ত শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, খুব শিগগিরই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের একটি বড় উদাহরণ। যারা এতিম শিশুদের মুখের খাবার চুরি করে, তারা কেবল আইন ভঙ্গ করছে না; তারা মানবিকতাকেও পদদলিত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
পরিশেষে
চট্টগ্রামের এতিমখানায় ঘটে যাওয়া এই চুরির ঘটনা সামাজিকভাবে নিন্দনীয়। এতিম ও অসহায় শিশুদের খাদ্য নিয়ে চুরি হওয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে এবং স্থানীয়রা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এতিম ও দরিদ্র শিশুদের নিরাপত্তা ও মৌলিক চাহিদা রক্ষায় সমাজ ও প্রশাসন কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে?
এম আর এম – ১০৩১, Signalbd.com