রাজনীতি

মুলা, বেগুন মার্কা নির্বাচন কমিশনের রুচিবোধের প্রকাশ: সারজিস

Advertisement

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের তালিকায় হাসির খোরাক জোগানো প্রতীক থাকার বিষয়টি তাদের রুচিবোধের পরিচায়ক। তিনি অভিযোগ করেন, প্রতীক নিয়ে কমিশন স্বেচ্ছাচারিতা করছে এবং স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও অন্যের প্রভাবে কাজ করছে।

রোববার সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ের শেরেবাংলা পার্কে স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নির্বাচন কমিশনের প্রতীক বিতর্ক নিয়ে সারজিসের বক্তব্য

সারজিস বলেন, 

“মুলা, বেগুন, খাট কিংবা থালা-বাটি—এ ধরনের প্রতীক মানুষের কাছে হাস্যকর মনে হয়। এগুলো কীভাবে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় স্থান পায়, সেটাই বড় প্রশ্ন। দেশের প্রতীকের কোনো অভাব নেই, অথচ জনগণের উপহাসের কারণ হতে পারে এমন প্রতীক রাখা হচ্ছে। এটা সরাসরি কমিশনের রুচিবোধের প্রকাশ।”

তিনি আরও জানান, এনসিপি পক্ষ থেকে কমিশনকে শাপলা প্রতীক (সাদা শাপলা বা লাল শাপলা) ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে শাপলার সঙ্গে কিছু সংযোজনও করা যেতে পারে।

প্রতীক সংকট ও এনসিপির দাবি

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের প্রতীক দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে এসেছে। এনসিপি বহু আগে থেকেই শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নীতিমালার কারণে কখনও কখনও দলগুলোকে বিকল্প প্রতীক নিতে বাধ্য হতে হয়। সারজিসের দাবি, শাপলা প্রতীক ব্যবহারে কোনো আইনি বাধা নেই, তবুও কমিশন অযথা জটিলতা তৈরি করছে।

তিনি বলেন,

“আমরা আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পাওয়ার যোগ্য। কোনো আইনি জটিলতা নেই। তারপরও নির্বাচন কমিশন নানা বাহানা করছে, যা তাদের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবকেই প্রমাণ করছে।”

প্রভাব: রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ নির্বাচন

সারজিসের মতে, নির্বাচন কমিশনের এই ধরনের সিদ্ধান্ত জনগণের মধ্যে কমিশনের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি প্রতীকের প্রশ্নে স্বেচ্ছাচারিতা চলতে থাকে, তবে এনসিপি আসন্ন নির্বাচনে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দিহান থাকবে।

তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কমিশন কোনো না কোনো চাপের মুখে কাজ করছে। রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কিংবা বাইরের প্রভাব—যেখান থেকেই হোক না কেন, স্বাধীন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এইভাবে কাজ করতে পারে না।”

পরিসংখ্যান ও তুলনা

বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০ এর বেশি। প্রতিটি দলের জন্য আলাদা প্রতীক বরাদ্দ থাকে। এ তালিকায় বর্তমানে কয়েক ডজন প্রতীক রয়েছে, যার মধ্যে কিছু প্রতীককে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হাস্যরসের জন্ম হয়েছে।

প্রতীক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও প্রায়শই এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও প্রতীক বরাদ্দের নিয়ম রয়েছে, তবে সেখানে প্রতীকগুলো সাধারণত কম হাস্যকর ও অধিক পরিচিত জিনিসকে কেন্দ্র করে বাছাই করা হয়।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রতীক শুধু ভোটের সময়ে প্রার্থীদের পরিচায়ক নয়, বরং জনগণের কাছে দলের ভাবমূর্তি তৈরি করার অন্যতম মাধ্যম। তাই প্রতীক নির্বাচনে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাবও বিবেচনায় রাখা জরুরি।

ঢাকার এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে শিক্ষার হার ও ভোটারদের প্রতীক নির্ভরতা বেশি, সেখানে প্রতীকের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রতীক নির্বাচনে স্বচ্ছতা, গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদা বজায় রাখা কমিশনের জন্য অপরিহার্য।”

এনসিপি নেতা সারজিস আলমের অভিযোগ আবারও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আসন্ন নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, কমিশন কি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে, নাকি প্রতীক সংকট আরও বিতর্ক সৃষ্টি করবে?

এম আর এম – ১৬২৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button