
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মি. রেতো রেংগলির সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রাতরাশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় রাজধানীর বসুন্ধরাস্থ আমিরে জামায়াতের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অত্যন্ত আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই রাষ্ট্রদূত মি. রেতো রেংগলি ডা. শফিকুর রহমানের সুস্থতার খোঁজখবর নেন এবং তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কূটনৈতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আলোচনা করা হয়।
ডা. শফিকুর রহমান বৈঠকে বলেন, “বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে স্থিতিশীল ও সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাবিনিময়, প্রযুক্তি ও সামাজিক উন্নয়নে দু’দেশের নাগরিকরা বিশেষ সুফল পাবে।”
মি. রেতো রেংগলি বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও উন্নত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং সামাজিক নীতিমালা সুইজারল্যান্ডের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হোক।”
বৈঠকের সময় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সুইস দূতাবাসের কাউন্সিলর ও হেড অব পলিটিক্যাল, ইকোনমিক ও কমিউনিকেশন অ্যাফেয়ার্স মি. আলবের্তো জিওভানেত্তি এবং সিনিয়র পলিটিক্যাল, ইকোনমিক এবং প্রেস অফিসার মি. খালেদ চৌধুরী।
জামায়াতের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং আমিরের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।
বৈঠকে আলোচিত বিষয়সমূহ
১. দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক
বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় যে, সুইজারল্যান্ড এবং বাংলাদেশ উভয়ই শান্তিপ্রিয়, ব্যবসা-বান্ধব ও উন্নয়নমুখী নীতি অনুসরণ করছে।
২. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
বৈঠকে উভয় দেশই ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। সুইজারল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা এবং বাণিজ্যিক খাতে আগ্রহী। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা ও সুযোগ তৈরি করার ব্যাপারে চূড়ান্ত মত বিনিময় হয়।
৩. শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিনিময়
বৈঠকে শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সুইজারল্যান্ডের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক
বৈঠকে সামাজিক উন্নয়ন, মানবসম্পদ বিকাশ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। দুই দেশের জনগণ একে অপরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও জানার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
ডা. শফিকুর রহমান বৈঠক শেষে বলেন, “সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সুযোগ বাড়ানো আমাদের কূটনৈতিক নীতি এবং দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং সুইজারল্যান্ডের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে মানবসম্পদ উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক নীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্বে নানা কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ বৈঠক সেই ধারাকে আরও জোরদার করবে এবং ভবিষ্যতে নতুন বিনিয়োগ ও শিক্ষা-প্রযুক্তি প্রকল্পের সূচনা করবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা চাই উভয় দেশের মধ্যে সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূ সহযোগিতা বাড়ুক। ব্যবসা, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে দু’দেশের নাগরিকরা সরাসরি উপকৃত হবেন।”
এদিকে, রাষ্ট্রদূত মি. রেতো রেংগলি বলেন, “বাংলাদেশ একটি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি। এখানে বিনিয়োগের সুযোগ অনেক। আমরা চাই বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হোক। ভবিষ্যতে আমরা যৌথ উদ্যোগ ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব।”
সাংবাদিক ও মিডিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বৈঠকের সময় উভয় পক্ষই সাংবাদিক ও মিডিয়ার সঙ্গে মত বিনিময় করেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়ে আরও সংবাদ প্রকাশের আহ্বান জানান।
ঢাকায় জামায়াত আমির ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও সামাজিক বিনিময় আরও জোরদার হবে।
এই বৈঠক কেবল রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি দুই দেশের জনগণের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই দেশের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে কাজ করে আসছে। এই বৈঠক সেই প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী করবে।
MAH – 13168 I Signalbd.com