রাজনীতি

প্রশাসনে ধর্মভিত্তিক দলের অনুগতদের বসানো হচ্ছে: রিজভীর অভিযোগ

Advertisement

বাংলাদেশের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে একটি বিশেষ ধর্মভিত্তিক দলের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি মনে করেন, এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বর্তমান সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ অভিযোগ করেন। এসময় তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) নবগঠিত কমিটির সদস্যদের সাথে ছিলেন।

রিজভীর অভিযোগ: প্রশাসনকে দলীয়করণ

রিজভী আহমেদ বলেন,
“প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে একটি বিশেষ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের বসানো হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, জনগণের ভোটের শক্তির ওপর আস্থা না রেখে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে মিথ্যা পরিসংখ্যান ও ভ্রান্ত তথ্য প্রচার করে জনগণকে ভুল পথে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে গত ১৫ বছরে কারা আপোষহীনভাবে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে, তা সাধারণ মানুষ জানে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বিরোধী দল বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জোরালো করছে। বিএনপির অভিযোগ, বর্তমান সরকার প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করে ডামি নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, যা জনগণ আর মেনে নেবে না।

রিজভী বলেন,
“দলীয়করণ করা প্রশাসনের মাধ্যমে কোনোদিনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জনগণ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তারা আর কোনো একতরফা বা ডামি নির্বাচন দেখতে চায় না। জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় বিএনপি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে।”

ভারতের পূজা মণ্ডপে ড. ইউনূসকে বিকৃত করার অভিযোগ

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী ভারতের একটি পূজা মণ্ডপে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি ব্যক্তিত্বকে অবমাননা করা শুধু অসম্মানজনকই নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

রিজভীর মতে, সরকার ও তাদের সহযোগী শক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ড. ইউনূসকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। তিনি বলেন, “ড. ইউনূসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে শুধু একজন ব্যক্তিকেই নয়, পুরো বাংলাদেশকেই হেয় করা হয়েছে।”

বিএনপির দীর্ঘদিনের দাবি: নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণও সরকারের হাতে, যা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকে অসম্ভব করে তুলেছে।

গত কয়েক মাস ধরে বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ, বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রধান দাবি—একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হোক।

আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরের মতোই বিএনপির এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই অজুহাত খুঁজছে এবং প্রশাসনকে দলীয়করণের অভিযোগ তুলছে।

তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের ভোটের শক্তিতেই ক্ষমতায় এসেছে এবং এবারও জনগণই তাদের বিজয়ী করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচন ঘিরে সবসময় প্রশাসনকে দলীয়করণের অভিযোগ ওঠে। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই বিরোধী দল এমন অভিযোগ করেছে। তবে বাস্তবে প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কতটা, তা নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া বলা কঠিন।

তারা মনে করেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আবারও বড় সংকটে পড়বে।

জনগণের প্রত্যাশা

সাধারণ মানুষ চায়, নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। বহুবার ডামি নির্বাচন, সহিংসতা, ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। এবার মানুষ চায়, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রকৃত প্রতিনিধিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ।

একজন ঢাকার সাধারণ ভোটার বলেন,
“আমরা শুধু চাই, আমাদের ভোট যেন আমরা স্বাধীনভাবে দিতে পারি। কে জিতবে, কে হারবে সেটা জনগণ ঠিক করবে। কিন্তু প্রশাসনকে যদি দলীয়ভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠু হবে না।”

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক উত্তপ্ত পর্যায়ে রয়েছে। একদিকে সরকার দাবি করছে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, অন্যদিকে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো বলছে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।

রিজভীর অভিযোগ এ বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রাজনৈতিক অঙ্গনকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অতএব, বাংলাদেশের মানুষ এখন অপেক্ষা করছে—আসন্ন নির্বাচন সত্যিই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে কিনা, নাকি আবারও একটি বিতর্কিত নির্বাচন দেশের রাজনীতিকে অচল করে দেবে।

MAH – 13150 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button