রাজনীতি

ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানে বিশাল বিক্ষোভ

Advertisement

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পেশোয়ারে বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ছিলেন ইমরানের হাজার হাজার সমর্থক ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI) দলের কর্মী।

ইমরানের বোন আলেমা খানের উপস্থিতি

বিক্ষোভে যোগ দেন ইমরানের বোন আলেমা খান, যিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আমার ভাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।” সমাবেশে সমর্থকরা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং ইমরানের মুক্তি চেয়ে বিশাল সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন।

ইমরান খানের রাজনৈতিক জীবন ও বিতর্ক

ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ক্রিকেট তারকা এবং ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের ক্রিকেট দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়।

তবে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়ান। পাকিস্তানে সেনা-রাজনীতির প্রভাব বিবেচনায়, ইমরানের নীতি ও কর্মসূচি নানা বিতর্কের জন্ম দেয়। ২০২২ সালে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে পরাজয় হয় এবং প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান ইমরান।

পরবর্তী সময়ে, ২০২৩ সালে ঘুষের মামলায় আটক হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক মামলা দায়ের রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মামলাগুলোই সমালোচনার মুখে।

পেশোয়ারে বিক্ষোভের বিস্তারিত

সমাবেশে উপস্থিত সমর্থকরা ইমরানের মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভে PTI দলের পতাকা এবং ইমরানের ছবি বহন করা হয়।

এছাড়া সমাবেশে মহিলা সমর্থক এবং তরুণ প্রজন্মও অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভে কণ্ঠস্বর উঠে, “ইমরান খানের অবিলম্বে মুক্তি চাই!” এবং “রাজনৈতিক মামলার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”

বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণ হলেও সরকারের নিরাপত্তা সংস্থা সেনাবাহিনী ও পুলিশ মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকে।

ইমরান খানের সমর্থকদের দাবি

১. ইমরান খানের মুক্তি
২. তার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার
৩. সরকারিভাবে তার মানবাধিকার ও আইনি অধিকার রক্ষা
৪. স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বিচার নিশ্চিত করা

এছাড়া সমর্থকরা অভিযোগ করেন যে, ইমরানকে রাজনৈতিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাদের দাবি, ইমরানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি

পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। গত দশকে সেনা-রাজনীতি ও রাজনৈতিক বিরোধ প্রতিনিয়ত দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে প্রভাবিত করেছে।

  • ২০১৮ সালে ইমরান খানের ক্ষমতায় আসা
  • সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ
  • অনাস্থা ভোটে পরাজয় ২০২২ সালে
  • ২০২৩ সালে ঘুষের মামলা ও কারাবন্দি
  • বর্তমানে ১৫০টির বেশি মামলা চলমান

এই প্রেক্ষাপটে ইমরানের মুক্তি চাওয়া সমর্থকদের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইমরান খানের কারাবন্দি থাকা এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও চোখ রাখছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা পাকিস্তানের সরকারের প্রতি আইনগত ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সতর্কতার আহ্বান জানাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। ইমরানের সমর্থকরা দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে পারেন, তবে সরকারের সাথে সংলাপের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কী বলছেন?

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইমরানের রাজনৈতিক প্রভাব এখনও শক্তিশালী। সমর্থকরা যেভাবে মাঠে নামছেন, তা নির্দেশ করে যে, পিটিআই দল ও ইমরানের জনপ্রিয়তা কমেনি।

বিশ্লেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, “ইমরান খানের মুক্তি ও রাজনৈতিক পুনর্গঠন পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমর্থকরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালান, তবে তা সরকারের জন্য একটি বার্তা।”

সমাবেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

বিক্ষোভ চলাকালীন, শহরের কিছু অংশে যানজট ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ব্যাঘাত দেখা দেয়। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সামাজিক মাধ্যমে বিক্ষোভের ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়। সমর্থকরা #FreeImranKhan, #PTI, #PakistanPolitics এর মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক স্তরে বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ইমরানের মুক্তি ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংকট বা সমাধানের পথ উভয়ই হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি সরকার সমর্থকদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, তা রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করবে।

অন্যদিকে, যদি মামলা চালু থাকে এবং কারাবন্দি রাখার নীতি অব্যাহত থাকে, তা আরও রাজনৈতিক আন্দোলন ও বিক্ষোভ সৃষ্টি করতে পারে।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুক্তি চাওয়ার জন্য পেশোয়ারে বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবেশে অংশ নেয় হাজার হাজার সমর্থক, যার মধ্যে ছিলেন ইমরানের বোন আলেমা খান। সমর্থকেরা সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং দাবি করেন ইমরানকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

ইমরানের রাজনৈতিক জীবন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ, অনাস্থা ভোটে পরাজয়, এবং ১৫০টির বেশি মামলা—all এই ঘটনাগুলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিসরকে উন্মাদিত করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই পরিস্থিতি নজরে রাখছেন, এবং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ইমরানের মুক্তি নিয়ে আগামী সপ্তাহগুলো রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

MAH – 13041 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button