ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় দুই দিনের সফরে আসছেন। সফরে অভিবাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সফরের ঘোষণা ও সময়সূচি
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগামী ৩০ আগস্ট ঢাকায় পৌঁছাবেন এবং ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এটি কোনো ইউরোপীয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারের আমলে প্রথম সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সফর নিয়ে ইতোমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এছাড়া কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রতিরক্ষা পর্যায়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সফরের পেছনের প্রেক্ষাপট
এটি হবে ইতালির কোনো প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর। এর আগে ১৯৯৮ সালে রোমানো প্রোদি ঢাকায় এসেছিলেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর এবার জর্জিয়া মেলোনির সফর নতুন মাত্রা যোগ করবে দুই দেশের সম্পর্ককে।
গত মে মাসে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশ সফরকালে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। সেই সময়েই ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফর নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক প্রস্তুতি চলছিল।
সফরে আলোচ্য বিষয়গুলো
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, এই সফরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে অভিবাসন। ইতালি চায় বাংলাদেশ থেকে বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে। ইতালিতে বর্তমানে হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। তাদের সুরক্ষা, অধিকার ও নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সুযোগ, যৌথ বিনিয়োগ, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়েও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে। ইতালি বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগে আগ্রহী বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন শীর্ষ নেতার এই সফর শুধু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, আঞ্চলিক রাজনীতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে। বিশেষ করে বৈশ্বিক অস্থিরতা, অভিবাসন সংকট এবং ইউরোপ-এশিয়া বাণিজ্য সংযোগের প্রেক্ষাপটে এ সফর তাৎপর্যপূর্ণ।
এছাড়া এই সফরের মাধ্যমে ইতালি দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ককে নতুনভাবে সাজাতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এ অঞ্চলে ইতালির জন্য একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
দ্বিপক্ষীয় পরিসংখ্যান ও উন্নয়ন সম্ভাবনা
বর্তমানে বাংলাদেশ-ইতালি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতালি ইউরোপের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানি গন্তব্য। তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল এবং চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি সামগ্রী।
অন্যদিকে, ইতালি থেকে বাংলাদেশে আসছে শিল্প যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি পণ্য এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম। আগামী কয়েক বছরে এই বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই দেশ একটি নতুন বাণিজ্য কাঠামো নিয়ে আলোচনা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. শফিউল আজম বলেন, “ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সফর বাংলাদেশের জন্য বড় একটি কূটনৈতিক অর্জন। এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মেহরাব হোসেন মনে করেন, “এই সফরের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতে অভিবাসন এবং বাণিজ্য নীতিতে ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটবে।”
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। অভিবাসন ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে যৌথ বিনিয়োগ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা হতে পারে। বাংলাদেশ সরকার ইতালিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক রূপরেখা তৈরি হতে পারে।
“এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইতালির সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে”—পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
সারসংক্ষেপ
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির আসন্ন সফর কেবল একটি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সফর নয়, বরং এটি হতে যাচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ককে পুনঃনির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অভিবাসন, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ রয়েছে এ সফরে। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনা কতটা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয়।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, সফরের সফলতা নির্ভর করছে আলোচনার ফলপ্রসূতা এবং ভবিষ্যতের বাস্তব পদক্ষেপের ওপর।
এম আর এম – ০৪৫২, Signalbd.com
				
					


