
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অবশেষে মুখ খুললেন। কয়েক মাস ধরে জাতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে নিশ্চুপ রেখেছিলেন। তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি সরাসরি মন্তব্য করেছেন, যা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছে।
জি এম কাদের জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
জাতীয় পার্টির অবস্থান ও রাজনৈতিক ভূমিকা
জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের পাশে থেকেছে। দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকা জাতীয় পার্টি কখনো সরাসরি সরকারে অংশ নেনি, তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে। এর ফলে অনেক সময় জাতীয় পার্টি “ট্রাম্প কার্ড” হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের ভোটে জাতীয় পার্টিকে বসানো হয়েছে বিরোধী দলের আসনে।
তিনি সম্প্রতি চ্যানেল ২৪-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন,
“আওয়ামী লীগের ভোটারদের কি নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে? ভোটার তালিকায় কি তাদের নাম থাকবে না? তারা কি ভোট দিতে পারবে না? যদি না হয়, তাহলে তারা আমাদের ভোট কেন দিতে পারবে না?”
জি এম কাদেরের দাবি, আওয়ামী লীগের ভোটাররা জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দেবে। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ভোটদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দলের সুযোগ-সুবিধা এবং প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন,
“যদি বিএনপি ভোটারদের ভালো সুযোগ-সুবিধা দেয় এবং নির্বাচনে জিতলে বিরক্ত না করার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তারা বিএনপিকেও ভোট দিতে পারে। কিন্তু জামায়াতকে ভোট দেওয়া হবে না।”
জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ অপরিহার্য
জাতীয় পার্টি সভাপতি মনে করেন, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন,
“জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখনও আমরা বাধা দিয়েছি। এটি দেশের জন্য ভালো হয়নি। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন না করলে নির্বাচন সঠিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। তবে এখন এই কথা বললেই আমি দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হই।”
এতে বোঝা যায়, জাতীয় পার্টি সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। জি এম কাদেরের মতে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করার জন্য রাজনৈতিক সহমর্মিতা অপরিহার্য।
বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে মন্তব্য
জি এম কাদের আরও বলেন, বিএনপিকে কোনঠাসা করে জামায়াতকে সামনে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন,
“ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার নয়, নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া উচিত।”
জাতীয় পার্টির এই অবস্থান রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং ভোটারদের মনোভাবকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে।
জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক শক্তি বৃদ্ধি
জি এম কাদের দাবি করেন, সম্প্রতি দলের আরও এক দফা ভাঙনের পর জাতীয় পার্টি আরও শক্তিশালী হয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য দৃঢ় হওয়ায় তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি শুধু আওয়ামী লীগের সমর্থক নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য প্রস্তুত। দলের এই দৃঢ় অবস্থান আগামী নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে।
নির্বাচনের সুষ্ঠু আয়োজন ও গ্রহণযোগ্যতা
জি এম কাদেরের মতে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে:
- সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- ভোটারদের অধিকার ও ভোট দেওয়ার সুযোগ সুনিশ্চিত করতে হবে।
- নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ ও নীতি নির্ধারণে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য। শুধু এক বা দুই দল অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনকে জনগণ স্বীকৃতি দেবে না।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেড় দশক ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার পরও তারা স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচয় বজায় রেখেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে জাতীয় পার্টি সব সময় বিচার, সমঝোতা এবং রাজনৈতিক সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে:
- ভোটের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে।
- নির্বাচনের প্রতি জনগণের বিশ্বাস বাড়বে।
- দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী হবে।
জি এম কাদেরের এই মন্তব্য একদিকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করছে, অন্যদিকে আগামী নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করার জন্য রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা প্রদান করছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলে জনগণ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য মনে করবে।
জাতীয় পার্টির এই স্পষ্ট অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেশের রাজনীতিতে নতুন আলো ফেলেছে। আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে সব দলের সমঝোতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধি করবে।
MAH – 12984 I Signalbd.com