রাজনীতি

নিউইয়র্কের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ অন্তর্বর্তী সরকারের

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে মঙ্গলবার জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং সরকার এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

ঘটনার বিস্তারিত

সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিছু বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আখতার হোসেনের দিকে ডিম নিক্ষেপ করেন। এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তাসনিম জারাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রতিও মৌখিক হুমকি ও উস্কানিমূলক আচরণ করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, “নিউইয়র্কের এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমরা গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিপন্থী। আমরা প্রত্যাশা করি, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত দায়ীদের আইনের আওতায় আনবে।”

ঘটনা

রাজনৈতিক নেতা ও প্রবাসী কমিউনিটির কর্মসূচি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ঘটনায় এর আগে একাধিকবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘাতের খবর প্রবাসী মহলে নতুন নয়। তবে নিউইয়র্কের বিমানবন্দর এলাকায় এ ধরনের প্রকাশ্য হামলা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন অনেকে।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অতীতে শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক সহিংসতার সংস্কৃতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও প্রভাব ফেলেছিল। এই ঘটনা সেই তিক্ত অতীতের বেদনাদায়ক স্মৃতি আবারও মনে করিয়ে দিল।

সরকারের প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল বলে সরকার জানায়। তবে শেষ মুহূর্তে ভিসাজনিত জটিলতার কারণে প্রতিনিধি দলকে বিকল্প পথে যেতে হয়, যেখানে নিরাপত্তা ঘাটতি তৈরি হয়।

এ বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “নিরাপত্তায় সাময়িক ঘাটতির সুযোগ নিয়ে এই হামলা চালানো হয়। তবে ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ মিশন। একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।”

সরকার আরও জানায়, এখন থেকে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিনিধিদলের নিরাপত্তা বহুলাংশে জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে রাজনৈতিক নেতাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনার পর প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা প্রবাসেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রবাসী নাগরিকদের একটি অংশ বলছে, এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির নেতিবাচক চিত্রকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে।

অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষ দাবি করছে, এই ধরনের হামলা পরিকল্পিত এবং এর পেছনে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সমর্থকদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারা মনে করেন, প্রবাসী রাজনীতিকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

বিশেষজ্ঞ মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবাসেও প্রভাব ফেলছে, যা দীর্ঘমেয়াদে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা মনে করেন, সরকারকে কূটনৈতিক স্তরে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে, যাতে বিদেশে অবস্থানরত রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো ঘাটতি না থাকে।

একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তপ্ত পরিস্থিতি এখন প্রবাসে প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু বাংলাদেশের নয়, আতিথ্য প্রদানকারী দেশের জন্যও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।”

সংক্ষিপ্তসার

নিউইয়র্কের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুঃখ প্রকাশ এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানকে স্পষ্ট করে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, ভবিষ্যতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কী ধরনের টেকসই পদক্ষেপ নেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এম আর এম – ১৪৮৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button