রাজনীতি

পিঠ বাঁচিয়ে আর রাজনীতি করা যাবে না: সারজিস

Advertisement

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সংগঠক (উত্তর) সারজিস আলম বলেছেন, “বাংলাদেশে পিঠ বাঁচিয়ে আর রাজনীতি করা যাবে না।” মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে।

সারজিস আলমের বক্তব্যে উঠে আসে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও ভারতের ভূমিকাসহ জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান। তার মতে, জনগণের আস্থা হারিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে ক্ষমতায় আসা অসম্ভব, এবং কোনো ধরনের পরোক্ষ সমঝোতার রাজনীতি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

ঘটনাটির বিস্তারিত

সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সারজিস আলম সরাসরি বিএনপিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন। তিনি বলেন, বিএনপি যদি ভারতের সঙ্গে বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পরিকল্পনা করে, তবে সেই প্রচেষ্টা সফল হবে না। জনগণ এখন সরাসরি উত্তর জানতে চায়, আর জনগণের রায়কে পাশ কাটিয়ে বিদেশি শক্তি বা এজেন্সির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়।

তার ভাষায়, “আমরা আর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা বলি না। আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে চাই, বিএনপি কি ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় আসতে চায়? জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোনো দল দীর্ঘমেয়াদে টিকতে পারবে না।”

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে পরস্পরবিরোধী শক্তিগুলোর সমঝোতা, বিদেশি প্রভাব এবং এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা হয়ে আসছে। বিশেষ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পালাবদলমূলক রাজনীতির কারণে জনগণের একাংশ হতাশা প্রকাশ করে আসছে।
এনসিপি নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে দলের নেতারা সরব হয়ে উঠেছেন, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রতীক বিতর্ক এবং বিদেশে কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায়। সারজিস আলমের বক্তব্যকেও অনেকে এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থানকে জোরদার করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

প্রবাসে হামলার প্রতিবাদ

নিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা সমাবেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বক্তারা এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান। তাদের মতে, প্রবাসে রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে নয়, বরং দেশের রাজনীতির সহিংস সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সারজিস আলম বলেন, “যেখানে দেশের ভেতরে মানুষ রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে, এখন সেই পরিবেশ বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক সংকেত বহন করছে।”

প্রতীক বিতর্ক নিয়ে বক্তব্য

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে তাদের পছন্দের প্রতীক ‘শাপলা’ দেওয়া সম্ভব নয়। ইসির এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন সারজিস আলম। তিনি দাবি করেন, আইনগত কোনো বাধা না থাকা সত্ত্বেও ইসি অজুহাত তৈরি করছে।
তার মতে, এনসিপি যখন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল, তখনই স্পষ্টভাবে শাপলা প্রতীক চাওয়া হয়েছিল। অথচ তালিকায় তা যুক্ত না করা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা। তিনি সতর্ক করে বলেন, “শাপলাই আমাদের প্রতীক হতে হবে। অন্য কোনো অপশন নেই। জনগণ আমাদের প্রতীক চেনে, তাই আমরা এর বাইরে যাব না।”

রাজনৈতিক প্রভাব ও বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারজিস আলমের সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো দেশের মূলধারার রাজনীতির প্রতি জনগণের হতাশাকে তুলে ধরছে। ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দলের প্রতি অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে এনসিপি নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছে।
তবে সমালোচকরা মনে করেন, এনসিপি এখনো সংগঠনগতভাবে দুর্বল, এবং কেবল বক্তৃতা বা সমাবেশের মাধ্যমে তারা কতটা রাজনৈতিক জায়গা তৈরি করতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সারজিস আলমের বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একধরনের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তবে এ ধরনের বক্তব্য বাস্তবে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করছে এনসিপির সাংগঠনিক সক্ষমতা এবং আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের ওপর।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হচ্ছে। এনসিপি যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, তবে তাদের বক্তব্য শুধু সমালোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রতিফলিত হতে পারে।”

সমাপনী মন্তব্য

সারজিস আলমের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, এনসিপি নিজেদের প্রতীক ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে আপসহীন থাকতে চায়। একইসাথে তারা বর্তমান রাজনৈতিক ধারা ও বিদেশি প্রভাবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
তবে এখন প্রশ্ন হলো, এনসিপি কতটা কার্যকরভাবে এই বক্তব্যকে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং জনগণকে নিজেদের পাশে আনতে সক্ষম হবে কি না।

এম আর এম – ১৪৭৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button