বিশ্ব

আফগানিস্তানে তালেবানের চতুর্থ বর্ষপূর্তি: ১৫ আগস্টে উল্লাস

Advertisement

আফগানিস্তানের মানুষ চার বছর পূর্ণ উদ্দীপনায় উদযাপন করেছে ১৫ আগস্ট। এ দিনটি আফগান ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ১৫ আগস্ট ২০২১ সালে তালেবান যোদ্ধারা রাজধানী কাবুল দখল করলে দেশটি দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পায়। এরপর থেকে এ দিনটি আফগান জনগণের জন্য একটি ঐতিহাসিক এবং আনন্দময় দিন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাজধানী কাবুলে উৎসবের আমেজ

আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ শনিবার জানায়, গতকাল সকাল থেকেই কাবুলের রাস্তাঘাটে মানুষ ব্যাপকভাবে উপস্থিত ছিলেন। হাজার হাজার মানুষ নেমেছেন সাদা রঙের কালিমা খচিত ইসলামিক পতাকা হাতে নিয়ে। রাস্তাঘাটে মিলিত সাধারণ মানুষ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, যুবক ও প্রবীণরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে দিনটি উদযাপন করেন।

এছাড়াও আফগান সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও উৎসবমুখর দৃশ্য দেখা গেছে। তারা পতাকা হাতে ধরে, পতাকা নাড়িয়ে, কাবুলের রাস্তায় একত্রিত হয়ে এই বিশেষ দিন উদযাপন করেছেন।

ময়দান ওয়ার্দাকের বাসিন্দা বশির আহমেদ সংবাদদাতাকে বলেন,

“২০ বছর পর আমরা ইসলামিক আমিরাতের শাসনের চতুর্থ বর্ষ উদযাপন করছি। আমরা এ দিনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছি। আমি আজকের আনন্দে এতটা খুশি যে, এমনকি ঈদের আনন্দও এর সঙ্গে তুলনা করা যায় না।”

কাবুলের বাসিন্দা নাসরুল্লাহ নাসরাত বলেন,

“আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা হলো, ইসলামিক আমিরাত সরকার যেন পুরো দেশ শাসন করতে পারে। বিশ্বে অন্যান্য দেশগুলোর উচিত রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে ইসলামিক সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং আফগান জাতিকে সহায়তা করা।”

আকাশে উত্সব, বিমানবাহিনীর প্রদর্শনী

গতকাল বিকেলের দিকে আফগান বিমানবাহিনীর বিমান কাবুলের আকাশে চক্কর দেয়। বিমান থেকে রঙ ছিটানো হয় এবং পাইলটরা বিভিন্ন কৌশলগত প্রদর্শনী দেখান। স্থানীয় মানুষ বিমান দেখার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন।

পাকতিয়ারের বাসিন্দা মোহাম্মদ নাবি বলেন,

“আফগানরা এক হয়েছে এবং সবাই খুশি। এটি সত্যিই একটি আনন্দের দিন।”

অন্যদিকে আজমাল নামের একজন ব্যক্তি বলেন,

“আজকের দিনটি আফগানিস্তানের জন্য বিশেষ। কারণ এদিন আফগানরা যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছে।”

তালেবান সরকারের বিশেষ উদযাপন

তালেবান সরকার এ দিনে হেলিকপ্টার থেকে অন্তত ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফুল ছিটিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এসব স্থানে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়।

সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন,

“এটি আফগান জাতির ঐক্য ও স্বাধীনতার প্রতীক। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতেও দেশের শান্তি এবং সমৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আফগানদের প্রত্যাশা

বিশ্বের অনেক দেশ এখনও তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। আফগান নাগরিকরা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাজনৈতিক বিরোধীতা বাদ দিয়ে আফগানিস্তানের জনগণকে সহায়তা করবে। তারা চায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছাক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের শাসন আগামী বছরগুলোতে দেশের স্থিতিশীলতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে নারীর অধিকার, গণতান্ত্রিক সুযোগ, ও মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চাপ এ সময় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

আফগানদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

আফগানিস্তান একটি প্রাচীন সভ্যতার দেশ। ২০ বছর ধরে দেশটি যুদ্ধের কবলে ছিল। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান শুরু হয়। এই দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে সাধারণ মানুষ যন্ত্রণায় কেঁপে উঠেছিল। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটি নতুন যুগের শুরু করে।

ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সৈন্যরা আফগানিস্তান থেকে প্রায় ২০ বছর পর প্রত্যাহার করেন। এ সময় আফগান জনগণ স্বাধীনতার আনন্দে উচ্ছ্বাসিত হয়।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

১৫ আগস্ট উদযাপন শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও ফেলেছে। কাবুল, কান্দাহার, হেরাত, মাজার-ই-শরীফসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তাঘাট আনন্দের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে। স্থানীয় বাজারে দেশি খাবার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং শিশুদের খেলাধুলা দৃশ্য বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করে।

শিক্ষাবিদদের দৃষ্টিকোণ

শিক্ষাবিদরা বলছেন,

“শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তালেবান সরকারের নীতিমালা আরও প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে, শিক্ষার সুযোগ নারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

অর্থনীতি, নিরাপত্তা, এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তালেবান সরকারের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। আফগান জনগণ আশা করছে, শান্তি ও সমৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকার কার্যকর নীতি গ্রহণ করবে।

MAH – 12343 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button