চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলায় এবারের আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সঠিক কৃষি পরামর্শ, অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকের পরিশ্রম মিলিত হয়ে এই ফলন সম্ভব হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। ধান উৎপাদনে এই সাফল্য কৃষকের মুখে আনন্দের ছোঁয়া নিয়ে এসেছে।
আমন ধানের চাষ বৃদ্ধি, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১,৭৫৪ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে কৃষকরা ১,৭৬০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ, এই মৌসুমে চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার জানান, “চলতি মৌসুমে নতুন জাতের ধান চাষের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে।”
নতুন ধানের জাত ও চাষ প্রণালী
২০২৪-২৫ অর্থবছরে হাইমচরের বিভিন্ন এলাকায় বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান ৪৮ ও ৪৯ সহ হাইব্রিড এবং উফসী জাতের ধানের চারা রোপণ করা হয়। স্থানীয় জাতের ধানও কিছু কিছু এলাকায় চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, “সব ধানের জাতেই এবার আশানুরূপ ফলন হয়েছে। রোগবালাই কম থাকায় কৃষকেরা এবার প্রচুর ধান পেয়েছেন।”
কৃষকের খুশি ও প্রত্যাশা
৩নং দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের পূর্বচর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ ব্যাপারী মাড়াইয়ের মাঠে দাঁড়িয়ে বলেন,
“আমন ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পেলে আরও উপকার হবে। তবে ভালো ফলন পেয়ে আমরা খুশি।”
তাদের গ্রামের দুলাল আখন যোগ করেন,
“এ বছর আমাদের ৭০ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ ফসল পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ।”
২নং আলগী দূর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের লামচর গ্রামের তনু ব্যাপারী এবং নয়ানী লক্ষীপুর গ্রামের নুরু মুন্সি সারের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন,
“রোগবালাই কম থাকার কারণে ভালো ফলন পেয়েছি। যদি সারের দাম কমানো যায়, তবে আমাদের জন্য আরও উপকার হবে।”
ধানের বাম্পার ফলনে হাইমচরের অর্থনৈতিক প্রভাব
বাম্পার ফলনের ফলে হাইমচরের কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থাও শক্তিশালী হচ্ছে। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সময় কৃষকরা শ্রমিক নিয়োগ করছেন, যা স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে, যারা অতীতে কৃষিকাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন, তারা এবার ভালো আয় করতে পারছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার বলেন,
“আমন মৌসুমে ভালো ফলন শুধু কৃষক নয়, পুরো উপজেলার অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করবে। আমরা চেষ্টা করছি চাষিদের ধান সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে।”
ধানের চাষে সাফল্যের কারণ
হাইমচরের কৃষকরা এবারের ভালো ফলনের কারণ হিসেবে মূলত তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন:
- অনুকূল আবহাওয়া – যেহেতু বৃষ্টিপাত নিয়মিত হয়েছে এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল, ধানের বৃদ্ধি হয়েছে।
- সঠিক সেচ ও পরিচর্যা – কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সেচ ও পরিচর্যা করেছেন।
- রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ – আগের বছরের তুলনায় রোগবালাই কম থাকার কারণে ফসল ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, “নতুন জাতের ধান চাষ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়। কৃষকরা এবার তা মেনে চলেছেন এবং সফল ফলন পেয়েছেন।”
কৃষকের প্রত্যাশা
কৃষকেরা আশা করছেন, এবার ধানের বাজার মূল্য ন্যায্য হবে। তারা মনে করছেন, ফলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার মূল্যও যদি সমানভাবে থাকে, তবে তাদের আয় বাড়বে এবং হাইমচরের কৃষি অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।
পূর্বচর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ ব্যাপারী বলেন,
“ফলন ভালো হয়েছে, এখন বাজারের ন্যায্য দাম আশা করছি। তা হলে পুরো বছর কৃষকেরা সন্তুষ্ট থাকবেন।”
দুলাল আখন বলেন,
“আমরা আমাদের পরিশ্রমের যথার্থ মূল্য চাই। ধানের ভালো ফলন অর্থনৈতিক সাফল্যেরও বার্তা।”
হাইমচরের ধানের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
উপজেলা কৃষি বিভাগ মনে করছে, নতুন জাতের ধানের চাষ এবং সঠিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করলে হাইমচরের ধানের উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব। ভবিষ্যতে কৃষকরা আরও উচ্চমানের বীজ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ধানের উৎপাদন ও গুণগত মান আরও উন্নত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার জানান,
“আমরা চাই হাইমচরের ধানের নাম দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও সুপরিচিত হোক। এজন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং সঠিক পরামর্শ দিতে আমরা কাজ করছি।”
হাইমচর উপজেলার এবারের আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন কৃষকের মুখে আনন্দের ঝলক নিয়ে এসেছে। অনুকূল আবহাওয়া, নতুন জাতের ধান, রোগবালাই কম থাকা এবং কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শের কারণে এবার কৃষকরা প্রচুর ফসল পেয়েছেন। ধান কাটার ও মাড়াইয়ের কাজে এখন হাইমচরের মাঠে ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কৃষকেরা আশা করছেন, ধানের ন্যায্য বাজার মূল্য নিশ্চিত হলে তাদের অর্থনৈতিক স্বস্তি আরও বাড়বে। হাইমচরের ধান উৎপাদন শুধু কৃষকের জীবিকা নয়, পুরো উপজেলার অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করবে।
MAH – 13981 I Signalbd.com



