বিশ্ব

 গাজাকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ‘অবিচ্ছেদ্য’ অংশ ঘোষণা করল ব্রিকস

Advertisement

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে গাজা উপত্যকাকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ এবং ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়েছে সংস্থাটি।

ব্রিকসের যৌথ ঘোষণা—গাজার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে গৃহীত যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ঘোষণায় সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

ব্রিকসের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, “আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি প্রশাসনের আহ্বান জানাই, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে।”

তারা জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদের ব্যাপারেও সমর্থন জানিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গাজায় চলমান সংকট এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন

ব্রিকস নেতারা ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা বন্ধের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গাজায় অনাহারকে একটি যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ।”

গাজার হাসপাতাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে—এমন সময় এই ঘোষণাকে ফিলিস্তিনিদের নৈতিক সমর্থন হিসেবেই দেখছে বিশ্লেষকরা।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি

ব্রিকস সদস্যরা তাত্ক্ষণিক, স্থায়ী ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন।

তারা গাজা ও অন্যান্য অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং সব বন্দি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

এই অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে একটি শক্ত বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এখনো ইসরায়েলের পক্ষেই অবস্থান করে আছে।

ব্রিকসের সম্প্রসারিত ভূমিকায় ফিলিস্তিন প্রশ্ন

বর্তমানে ব্রিকসের সদস্য সংখ্যা ১০। এর মধ্যে রয়েছে: ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এই জোট ক্রমেই পশ্চিমা প্রভাবের বিপরীতে একটি বিকল্প কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তারা যেভাবে সম্মিলিত অবস্থান নিয়েছে, তা ভবিষ্যতের কূটনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে এই ঘোষণা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রিকসের এই অবস্থান শুধু প্রতীকী নয়, এটি ভবিষ্যতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনের জন্য সমর্থন আদায়ে সহায়ক হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “ব্রিকস যে ফিলিস্তিন প্রশ্নে একক কণ্ঠে কথা বলছে, তা বড় ধরনের কূটনৈতিক বার্তা—বিশেষ করে পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে।”

তবে বিশ্লেষকেরা এটাও মনে করছেন, এই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক জনমত ও চাপ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থেকে।

“গাজা শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি ফিলিস্তিনের আত্মপরিচয়ের প্রতীক”—ব্রিকসের যৌথ বিবৃতি।

আগামী দিনের পরিণতি কী?

ব্রিকসের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক বিজয়। তবে বাস্তবে গাজায় শান্তি ফিরবে কি না, তা নির্ভর করছে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকার ওপর।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানো না গেলে, শুধু বিবৃতি দিয়ে বাস্তবতা বদলানো যাবে না।

সারসংক্ষেপ 

ব্রিকস জোটের সর্বশেষ সম্মেলনে গাজা উপত্যকাকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা করা হয়েছে। জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এছাড়া গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা।

এম আর এম – ০২১৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button